Android (operating system)

অ্যান্ড্রয়েড (অপারেটিং সিস্টেম)

অ্যান্ড্রয়েড হলো একটি মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম যা প্রধানত স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট-এর জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং গুগল কর্তৃক উদ্ভাবিত। বর্তমানে, অ্যান্ড্রয়েড বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম, যা স্মার্টফোন বাজারের প্রায় ৮৫% নিয়ন্ত্রণ করে। এই অপারেটিং সিস্টেমটি শুধু স্মার্টফোন নয়, স্মার্টওয়াচ, টিভি, গেম কনসোল এবং অন্যান্য বিভিন্ন ডিভাইসেও ব্যবহৃত হয়।

ইতিহাস

অ্যান্ড্রয়েডের যাত্রা শুরু হয় ২০০৩ সালে, যখন অ্যান্ডি রুবিন, রিচ মাইনার, নিকলাস ব্রাউন এবং ক্রিস হোয়াইট নামের চারজন উদ্যোক্তা মিলে "অ্যান্ড্রয়েড ইনকর্পোরেটেড" নামক একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাথমিকভাবে, তারা ডিজিটাল ক্যামেরাগুলোর জন্য একটি উন্নত অপারেটিং সিস্টেম তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা বুঝতে পারেন যে স্মার্টফোনের বাজারেই তাদের প্রযুক্তির চাহিদা বেশি।

২০০৫ সালে গুগল অ্যান্ড্রোয়েড ইনকর্পোরেটেডকে অধিগ্রহণ করে এবং অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের উন্নয়ন শুরু করে। ২০০৭ সালের ৫ নভেম্বর গুগল আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যান্ড্রয়েডকে ওপেন হ্যান্ডসেট অ্যালায়েন্স-এর সাথে যুক্ত করে এবং ২০০৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম অ্যান্ড্রয়েড ফোন এইচটিসি ড্রিম বাজারে আত্মপ্রকাশ করে।

বৈশিষ্ট্যসমূহ

অ্যান্ড্রয়েডের সাফল্যের পেছনে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

ওপেন সোর্স: অ্যান্ড্রয়েড একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম। এর সোর্স কোড সকলের জন্য উন্মুক্ত, যা ডেভেলপারদের নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টমাইজ করতে সাহায্য করে।
অ্যাপ ইকোসিস্টেম: গুগল প্লে স্টোর-এ লক্ষ লক্ষ অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে।
কাস্টমাইজেশন: অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী হোম স্ক্রিন, উইজেট এবং থিম পরিবর্তন করতে পারে।
মাল্টিটাস্কিং: অ্যান্ড্রয়েড একই সময়ে একাধিক অ্যাপ্লিকেশন চালানোর সুবিধা দেয়।
নোটিফিকেশন সিস্টেম: অ্যান্ড্রয়েডের নোটিফিকেশন সিস্টেম ব্যবহারকারীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে অবগত রাখে।
হার্ডওয়্যার সমর্থন: অ্যান্ড্রয়েড বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার সমর্থন করে, যা এটিকে বিভিন্ন ডিভাইসে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়।
গুগল পরিষেবা: অ্যান্ড্রয়েড গুগল এর বিভিন্ন পরিষেবা যেমন - জিমেল, গুগল ম্যাপস, ইউটিউব এবং গুগল ড্রাইভ এর সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করে।

অ্যান্ড্রয়েডের সংস্করণসমূহ

অ্যান্ড্রয়েড বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু সংস্করণ এবং তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো:

অ্যান্ড্রয়েডের সংস্করণসমূহ
সংস্করণ	কোডনাম	প্রকাশের তারিখ	প্রধান বৈশিষ্ট্য
১.০	Astro	সেপ্টেম্বর ২৩, ২০০৮	প্রথম অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ, গুগল প্লে স্টোরের অভাব।
১.১	Bender	ফেব্রুয়ারি ৯, ২০০৯	এপিআই (API) এর উন্নতি।
১.৫	Cupcake	এপ্রিল ৩০, ২০০৯	ভার্চুয়াল কীবোর্ড এবং ভিডিও রেকর্ডিং এর সুবিধা।
১.৬	Donut	সেপ্টেম্বর ১৫, ২০০৯	সার্চ কার্যকারিতা এবং ভয়েস সার্চের সংযোজন।
২.০	Eclair	অক্টোবর ২৬, ২০০৯	একাধিক অ্যাকাউন্ট সমর্থন এবং ফ্ল্যাশ সমর্থন।
২.২	Froyo	মে ২০, ২০১০	গতি এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি।
২.৩	Gingerbread	ডিসেম্বর ৬, ২০১০	ইউজার ইন্টারফেসের উন্নতি এবং গেম সেন্টার সংযোজন।
৩.০	Honeycomb	ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১১	ট্যাবলেট ডিভাইসের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা।
৪.০	Ice Cream Sandwich	অক্টোবর ১৮, ২০১১	ইউজার ইন্টারফেসের আধুনিকীকরণ এবং ফেস আনলক ফিচার।
৪.১	Jelly Bean	জুলাই ৯, ২০১২	গুগল নাউ (Google Now) এবং উন্নত নোটিফিকেশন।
৪.২	Jelly Bean MR1	অক্টোবর ২৯, ২০১২	মাল্টি ইউজার সমর্থন এবং উন্নত ট্যাবলেট অভিজ্ঞতা।
৪.৪	KitKat	অক্টোবর ৩১, ২০১৩	কম র‍্যাম (RAM) ব্যবহার করে ভালো পারফরম্যান্স।
৫.০	Lollipop	নভেম্বর ১২, ২০১৪	ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন এবং উন্নত ব্যাটারি লাইফ।
৬.০	Marshmallow	অক্টোবর ৫, ২০১৬	অ্যাপ পারমিশন নিয়ন্ত্রণ এবং ডু নট ডিস্টার্ব মোড।
৭.০	Nougat	আগস্ট ২২, ২০১৬	মাল্টি-উইন্ডো সমর্থন এবং কুইক সুইচিং।
৮.০	Oreo	আগস্ট ২১, ২০১৭	পিকচার-ইন-পিকচার মোড এবং অটোফিল API।
৯.০	Pie	আগস্ট ৬, ২০১৮	অঙ্গভঙ্গি নেভিগেশন এবং ডিজিটাল ওয়েলবিং।
১০	Q	সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯	ডার্ক মোড এবং উন্নত গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রণ।
১১	R	সেপ্টেম্বর ৮, ২০২০	কথোপকথন নোটিফিকেশন এবং স্ক্রিন রেকর্ডিং।
১২	S	অক্টোবর ৪, ২০২১	ম্যাটেরিয়াল ইউ (Material You) এবং উন্নত প্রাইভেসি ড্যাশবোর্ড।
১৩	Tiramisu	আগস্ট ১৫, ২০২২	থিমড অ্যাপ আইকন এবং উন্নত ফটো পিকার।
১৪	Upside Down Cake	অক্টোবর ৪, ২০২৩	কাস্টমাইজেশন এবং নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলির উন্নতি।

আর্কিটেকচার

অ্যান্ড্রয়েডের আর্কিটেকচার চারটি প্রধান স্তরে বিভক্ত:

লিনাক্স কার্নেল: এটি অ্যান্ড্রয়েডের ভিত্তি, যা হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।
হার্ডওয়্যার অ্যাবস্ট্রাকশন লেয়ার (HAL): এটি হার্ডওয়্যার প্রস্তুতকারকদের জন্য নির্দিষ্ট ড্রাইভার সরবরাহ করে।
অ্যান্ড্রয়েড রানটাইম (ART): এটি অ্যাপ্লিকেশন চালানোর জন্য একটি রানটাইম পরিবেশ সরবরাহ করে।
অ্যাপ্লিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক: এটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় লাইব্রেরি এবং এপিআই সরবরাহ করে।

ব্যবহার এবং জনপ্রিয়তা

অ্যান্ড্রয়েড বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম। এর প্রধান কারণগুলো হলো:

ওপেন সোর্স: ওপেন সোর্স হওয়ার কারণে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের ডিভাইসে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করতে উৎসাহিত হয়।
বিস্তৃত হার্ডওয়্যার সমর্থন: অ্যান্ড্রয়েড বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যারে কাজ করতে সক্ষম।
অ্যাপের প্রাচুর্য: গুগল প্লে স্টোরে অসংখ্য অ্যাপ থাকায় ব্যবহারকারীরা তাদের প্রয়োজনীয় যেকোনো অ্যাপ খুঁজে নিতে পারে।
গুগলের সমর্থন: গুগল অ্যান্ড্রয়েডের উন্নয়নে लगातार সহায়তা প্রদান করে।

নিরাপত্তা

অ্যান্ড্রয়েডের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গুগল নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা আপডেট প্রকাশ করে, যা ডিভাইসগুলোকে বিভিন্ন ম্যালওয়্যার এবং ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা তাদের ডিভাইসের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে, যেমন - শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা, সন্দেহজনক অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকা এবং নিয়মিতভাবে ডিভাইস আপডেট করা।

ভবিষ্যৎ

অ্যান্ড্রয়েডের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। গুগল लगातार নতুন নতুন ফিচার এবং প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে, যা অ্যান্ড্রয়েডকে আরও উন্নত এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব করে তুলবে। ফোল্ডেবল ফোন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) এর মতো নতুন প্রযুক্তির সাথে অ্যান্ড্রয়েডের интеграশন ভবিষ্যতে মোবাইল কম্পিউটিং-এর নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

অতিরিক্ত তথ্য

অ্যান্ড্রয়েড ডেভেলপমেন্ট: অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন তৈরির প্রক্রিয়া।
অ্যান্ড্রয়েড মার্কেট শেয়ার: বিভিন্ন দেশে অ্যান্ড্রয়েডের বাজার দখলের পরিমাণ।
গুগল প্লে স্টোর: অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনের প্রধান উৎস।
অ্যান্ড্রয়েড ফোরাম: অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য অনলাইন কমিউনিটি।
কাস্টম রম: অ্যান্ড্রয়েডের পরিবর্তিত সংস্করণ।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে অ্যান্ড্রয়েডের সম্পর্ক

যদিও সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর জন্য বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবসায়ীদের যেকোনো স্থান থেকে ট্রেড করার সুবিধা প্রদান করে। তবে, বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ, এবং এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের আগে ভালোভাবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ভলিউম বিশ্লেষণ, এবং মানি ম্যানেজমেন্ট এর মতো কৌশলগুলো বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

File:Binary option chart.png

বাইনারি অপশন চার্ট

বাইনারি অপশন ট্রেডিং সম্পর্কিত আরও জানতে:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ