ওয়ালপেপার
ওয়ালপেপার
ওয়ালপেপার হলো দেয়াল আচ্ছাদনের জন্য ব্যবহৃত একটি বিশেষ ধরনের কাগজ বা অন্য কোনো উপাদান। এটি একটি ঘরের অভ্যন্তরীণ সজ্জার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ওয়ালপেপার শুধু দেয়ালকে সুন্দর করে না, এটি দেয়ালের ছোটখাটো ত্রুটিগুলিও ঢেকে রাখে এবং ঘরকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
ইতিহাস
ওয়ালপাপারের ইতিহাস বেশ পুরনো। এর শুরু চীনে, খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে। তখন চালের খড় এবং অন্যান্য উদ্ভিজ্জ ফাইবার দিয়ে তৈরি কাগজ ব্যবহার করা হতো দেয়াল আচ্ছাদনের জন্য। এরপর ১৪শ শতাব্দীতে ইউরোপে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রথমে এটি শুধুমাত্র ধনী ব্যক্তিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কারণ, এটি ছিল বেশ মূল্যবান। কাঠের ব্লকের মাধ্যমে নকশা তৈরি করে হাতে রং করা হতো এই ওয়ালপেপারগুলো।
১৮শ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের ফলে ওয়ালপেপার উৎপাদন সহজলভ্য হয়ে যায় এবং দামও কমে আসে। বাষ্পচালিত প্রিন্টিং এবং উন্নত কাগজ তৈরির কৌশল উদ্ভাবিত হওয়ায় ব্যাপকভাবে উৎপাদন শুরু হয়। তখন থেকে এটি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসে।
প্রকারভেদ
ওয়ালপেপার বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে, যা উপাদান, নকশা এবং ব্যবহারের ধরনের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন হয়। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকার আলোচনা করা হলো:
- কাগজের ওয়ালপেপার: এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের ওয়ালপেপার। এটি পরিবেশ-বান্ধব এবং সহজে ব্যবহার করা যায়। তবে, এটি খুব বেশি টেকসই নয় এবং পরিষ্কার করা কঠিন।
- ভিনাইল ওয়ালপেপার: এটি কাগজের চেয়ে বেশি টেকসই এবং পরিষ্কার করা সহজ। এটি আর্দ্রতা প্রতিরোধী হওয়ায় বাথরুম ও রান্নাঘরের জন্য উপযুক্ত।
- নন-ওভেন ওয়ালপেপার: এই ধরনের ওয়ালপেপার তৈরি হয় সিনথেটিক ফাইবার দিয়ে। এটি সহজে লাগানো যায় এবং দেয়াল থেকে সরানোও সহজ।
- ফ্যাব্রিক ওয়ালপেপার: এটি টেক্সটাইল বা কাপড় দিয়ে তৈরি হয়, যা ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তবে, এটি দামি এবং পরিষ্কার করা কঠিন।
- মেটালিক ওয়ালপেপার: এইewallpaper-এ ধাতব উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা এটিকে চকচকে এবং আকর্ষণীয় করে তোলে।
- পেইন্টযোগ্য ওয়ালপেপার: এই ওয়ালপেপার প্রথমে লাগিয়ে পরে নিজের পছন্দমতো রং করা যায়। এটি দেয়ালকে একটি টেক্সচার্ড লুক দেয়।
- ডিজিটাল ওয়ালপেপার: আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি এই ওয়ালপেপারগুলোতে যেকোনো ধরনের ছবি বা নকশা ব্যবহার করা যায়।
নকশা এবং শৈলী
ওয়ালপাপারের নকশা এবং শৈলী বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এটি ব্যবহারকারীর রুচি এবং ঘরের সাজসজ্জার উপর নির্ভর করে। কিছু জনপ্রিয় নকশা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ফ্লোরাল: ফুলের নকশা সবসময়ই জনপ্রিয়। এটি ঘরকে সজীব এবং প্রাণবন্ত করে তোলে।
- জ্যামিতিক: জ্যামিতিক নকশা আধুনিক এবং আকর্ষণীয়। এটি যেকোনো ঘরের জন্য উপযুক্ত।
- স্ট্রাইপস: উল্লম্ব স্ট্রাইপস ঘরকে লম্বা দেখাতে সাহায্য করে, যেখানে অনুভূমিক স্ট্রাইপস ঘরকে প্রশস্ত করে।
- ডটস এবং টেক্সচার: ছোট ছোট ডটস বা টেক্সচার্ড নকশা দেয়ালকে আকর্ষণীয় করে তোলে।
- ল্যান্ডস্কেপ: প্রাকৃতিক দৃশ্যের ওয়ালপেপার ঘরকে শান্ত এবং স্নিগ্ধ করে।
- অ্যাবস্ট্রাক্ট: বিমূর্ত নকশা আধুনিক এবং সৃজনশীল।
ব্যবহারের ক্ষেত্র
ওয়ালপেপার শুধুমাত্র ঘরের দেয়াল নয়, বিভিন্ন স্থানে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন:
- লিভিং রুম: এখানে উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয় নকশার ওয়ালপেপার ব্যবহার করা যেতে পারে।
- বেডরুম: বেডরুমে শান্ত এবং স্নিগ্ধ রঙের ওয়ালপেপার ব্যবহার করা ভালো।
- বাথরুম: বাথরুমে আর্দ্রতা প্রতিরোধী ভিনাইল ওয়ালপেপার ব্যবহার করা উচিত।
- রান্নাঘর: রান্নাঘরে তেল এবং মশলার দাগ থেকে রক্ষা পেতে ভিনাইল বা পেইন্টযোগ্য ওয়ালপেপার ব্যবহার করা যেতে পারে।
- অফিস: অফিসে পেশাদারী লুকের জন্য জ্যামিতিক বা টেক্সচার্ড ওয়ালপেপার ব্যবহার করা যেতে পারে।
- শিশুদের ঘর: শিশুদের ঘরে কার্টুন বা শিক্ষামূলক নকশার ওয়ালপেপার ব্যবহার করা যেতে পারে।
ওয়ালপেপার লাগানোর নিয়ম
ওয়ালপেপার লাগানো একটি শিল্প। সঠিকভাবে না লাগালে এটি দেখতে খারাপ লাগতে পারে। নিচে ওয়ালপেপার লাগানোর কিছু নিয়ম উল্লেখ করা হলো:
1. দেয়াল প্রস্তুতি: প্রথমে দেয়াল পরিষ্কার এবং মসৃণ করতে হবে। পুরনো ওয়ালপেপার থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। দেয়ালের গর্ত বা ফাটল থাকলে তা পূরণ করতে হবে। 2. মাপ নেওয়া: দেয়ালের উচ্চতা এবং প্রস্থ মেপে ওয়ালপেপার কতগুলো প্রয়োজন হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। 3. কাটিং: ওয়ালপেপারগুলো সঠিকভাবে কেটে নিতে হবে। নকশা মেলানোর জন্য অতিরিক্ত কাগজ রাখতে হবে। 4. আঠা লাগানো: Wallpapers-এর পিছনে আঠা লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, যাতে আঠা ভালোভাবে শোষিত হয়। 5. লাগানো: এরপর ওয়ালপেপারটি দেয়ালের উপর সাবধানে লাগাতে হবে এবং বাতাস বের করে দিতে হবে। 6. অতিরিক্ত কাগজ কাটা: Wallpaper লাগানোর পর অতিরিক্ত কাগজগুলো ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে ফেলতে হবে। 7. পরিষ্কার করা: সবশেষে, দেয়ালটি পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ওয়ালপেপার সরানোর নিয়ম
পুরনো ওয়ালপেপার সরানোও একটি কঠিন কাজ। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো:
1. আঠা নরম করা: প্রথমে গরম জল এবং সামান্য ডিটারজেন্ট মিশিয়ে একটি দ্রবণ তৈরি করতে হবে। এটি দেয়ালের উপর স্প্রে করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, যাতে আঠা নরম হয়ে যায়। 2. ওয়ালপেপার তুলে আনা: এরপর একটি স্কraper ব্যবহার করে সাবধানে ওয়ালপেপার তুলে আনতে হবে। 3. অবশিষ্ট আঠা পরিষ্কার করা: Wallpaper সরানোর পর দেয়ালের উপর লেগে থাকা অবশিষ্ট আঠা গরম জল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। 4. দেয়াল মসৃণ করা: সবশেষে, দেয়ালটি মসৃণ করতে হবে, যাতে নতুন Wallpaper লাগাতে সুবিধা হয়।
ওয়ালপেপার নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়
ওয়ালপেপার কেনার আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত। যেমন:
- ঘরের আকার: ছোট ঘরের জন্য হালকা রঙের ওয়ালপেপার এবং বড় ঘরের জন্য গাঢ় রঙের ওয়ালপেপার ব্যবহার করা ভালো।
- ঘরের ব্যবহার: বাথরুম ও রান্নাঘরের জন্য আর্দ্রতা প্রতিরোধী ওয়ালপেপার এবং লিভিং রুম ও বেডরুমের জন্য সাধারণ ওয়ালপেপার ব্যবহার করা যেতে পারে।
- নকশার পছন্দ: নিজের রুচি এবং ঘরের সাজসজ্জার সাথে মানানসই নকশা নির্বাচন করা উচিত।
- গুণমান: ভালো মানের ওয়ালপেপার টেকসই হয় এবং দীর্ঘকাল ব্যবহার করা যায়।
- দাম: বাজেট অনুযায়ী ওয়ালপেপার নির্বাচন করা উচিত।
ওয়ালপেপার এবং অন্যান্য দেয়াল আচ্ছাদন
ওয়ালপাপারের বিকল্প হিসেবে আরও কিছু দেয়াল আচ্ছাদন উপকরণ রয়েছে। যেমন:
- পেইন্ট: এটি সবচেয়ে সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী উপায়।
- ওয়াল প্যানেল: এটি দেয়ালকে একটি আকর্ষণীয় লুক দেয় এবং এটি টেকসই।
- ওয়াল স্টিকার: এটি সহজে লাগানো যায় এবং সরানো যায়।
- টেক্সচার পেইন্ট: এটি দেয়ালকে একটি টেক্সচার্ড লুক দেয়।
- টাইলস: এটি বাথরুম ও রান্নাঘরের জন্য উপযুক্ত।
রক্ষণাবেক্ষণ
ওয়ালপেপার রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ। নিয়মিত শুকনো কাপড় দিয়ে ধুলো পরিষ্কার করতে হবে। দাগ লাগলে হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতো করে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে।
প্রকার | বৈশিষ্ট্য | ব্যবহারের ক্ষেত্র | |
কাগজের ওয়ালপেপার | সাশ্রয়ী, পরিবেশ-বান্ধব | লিভিং রুম, বেডরুম | |
ভিনাইল ওয়ালপেপার | টেকসই, পরিষ্কার করা সহজ, আর্দ্রতা প্রতিরোধী | বাথরুম, রান্নাঘর | |
নন-ওভেন ওয়ালপেপার | সহজে লাগানো ও সরানো যায় | যেকোনো ঘর | |
ফ্যাব্রিক ওয়ালপেপার | আকর্ষণীয়, টেক্সচার্ড | লিভিং রুম, বেডরুম |
আরও জানতে
- অভ্যন্তরীণ সজ্জা
- রং
- টেক্সটাইল
- শিল্প বিপ্লব
- বাথরুম
- রান্নাঘর
- ঘর
- অফিস
- লিভিং রুম
- বেডরুম
- ওয়াল স্টিকার
- পেইন্ট
- ওয়াল প্যানেল
- টেক্সচার পেইন্ট
- টাইলস
- নকশা
- সাজসজ্জা
- আর্দ্রতা
- আঠা
- স্কার্পার
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ