আন্তর্জাতিক কর

আন্তর্জাতিক কর

ভূমিকা: আন্তর্জাতিক কর হলো সেই সকল কর, যা একাধিক দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক লেনদেন বা আয়ের উপর আরোপিত হয়। বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রসারের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক করের গুরুত্ব বাড়ছে। ব্যক্তি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই আন্তর্জাতিক করের নিয়মকানুন বোঝা অত্যাবশ্যক। এই নিবন্ধে আন্তর্জাতিক করের বিভিন্ন দিক, যেমন - করের প্রকারভেদ, দ্বৈত কর ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক কর ফাঁকি এবং এর প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হলো।

আন্তর্জাতিক করের প্রকারভেদ: বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক কর প্রচলিত আছে। এদের মধ্যে কয়েকটি প্রধান কর নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. আমদানি শুল্ক (Import Duty): একটি দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য আমদানির উপর এই শুল্ক আরোপ করা হয়। এটি সাধারণত পণ্যের মূল্য, ওজন বা পরিমাণের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। আমদানি বাণিজ্য এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই শুল্ক।

২. রপ্তানি শুল্ক (Export Duty): দেশ থেকে পণ্য রপ্তানির উপর এই শুল্ক আরোপ করা হয়। যদিও অনেক দেশ রপ্তানিকে উৎসাহিত করার জন্য এই শুল্ক হ্রাস করে বা তুলে দেয়। রপ্তানি বাণিজ্য এর ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য।

৩. পরিষেবা কর (Service Tax): আন্তর্জাতিক পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এই কর প্রযোজ্য। যেমন - পরামর্শ, প্রযুক্তিগত সহায়তা, ইত্যাদি। ফ্রিল্যান্সিং এবং অনলাইন সার্ভিসের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ।

৪. লভ্যাংশ কর (Dividend Tax): বিদেশী বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্ত লভ্যাংশের উপর এই কর আরোপ করা হয়। বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

৫. রয়্যালটি কর (Royalty Tax): মেধা সম্পত্তি (যেমন - পেটেন্ট, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট) ব্যবহারের জন্য রয়্যালটি প্রদানের উপর এই কর আরোপ করা হয়। মেধা সম্পদ অধিকার এর সাথে এটি জড়িত।

৬. মূলধন লাভ কর (Capital Gains Tax): আন্তর্জাতিক শেয়ার বাজার বা অন্য কোনো মূলধন সম্পদ বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত লাভের উপর এই কর প্রযোজ্য। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বৈত কর ব্যবস্থা (Double Taxation): দ্বৈত কর ব্যবস্থা হলো একই আয় বা মূলধনের উপর দুটি ভিন্ন দেশের কর আরোপ করা। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি বড় বাধা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন দেশ দ্বৈত কর চুক্তি (Double Taxation Avoidance Agreement - DTAA) করে থাকে।

দ্বৈত কর চুক্তির উদ্দেশ্য:

• করের বোঝা কমানো।
• আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ উৎসাহিত করা।
• কর ফাঁকি রোধ করা।
• তথ্য আদান প্রদানে সহায়তা করা।

DTAA সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে:

• আবাসিকতার নিয়ম (Rules of Residence)।
• আয়ের উৎস অনুযায়ী কর আরোপের নিয়ম।
• কর রেয়াত (Tax Credit) পদ্ধতি।
• কর অব্যাহতি (Tax Exemption) পদ্ধতি।
• তথ্য আদান প্রদানের নিয়ম।

উদাহরণস্বরূপ, ভারত এবং সিঙ্গাপুরের মধ্যে একটি DTAA রয়েছে, যা উভয় দেশের মধ্যে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যকে সহজ করে। ভারত-সিঙ্গাপুর সম্পর্ক এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এটি।

আন্তর্জাতিক কর ফাঁকি ও প্রতিকার: আন্তর্জাতিক কর ফাঁকি হলো অবৈধ উপায়ে কর এড়িয়ে যাওয়া। এটি বিভিন্ন উপায়ে করা হতে পারে, যেমন -

• তহবিল স্থানান্তর (Transfer Pricing):

বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের আন্তঃশাখা লেনদেনের মাধ্যমে আয় স্থানান্তর করে করের বোঝা কমাতে চেষ্টা করে।

• শেল কোম্পানি (Shell Company):

নামেমাত্র কোম্পানি তৈরি করে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেন করা হয়।

• লুকানো সম্পদ (Hidden Assets):

বিদেশে গোপন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সম্পদ লুকিয়ে রাখা হয়।

আন্তর্জাতিক কর ফাঁকি রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে:

• বেস ইরোশন অ্যান্ড প্রফিট শিফটিং (Base Erosion and Profit Shifting - BEPS):

এটি OECD (Organisation for Economic Co-operation and Development) কর্তৃক গৃহীত একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, যার মাধ্যমে কর ফাঁকি রোধ করা যায়। OECDর ভূমিকা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

• স্বয়ংক্রিয় তথ্য বিনিময় (Automatic Exchange of Information - AEOI):

বিভিন্ন দেশ একে অপরের সাথে আর্থিক তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিনিময় করে কর ফাঁকি রোধ করে।

• FATCA (Foreign Account Tax Compliance Act):

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই আইন বিদেশী ব্যাংকগুলোকে মার্কিন নাগরিকদের আর্থিক তথ্য সরবরাহ করতে বাধ্য করে।

• CRS (Common Reporting Standard):

এটি OECD কর্তৃক প্রণীত একটি মান, যা AEOI-এর একটি অংশ।

গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক কর সংস্থা:

• OECD: আন্তর্জাতিক কর নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
• UN: উন্নয়নশীল দেশগুলোর কর সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
• IMF: আন্তর্জাতিক আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করে।
• World Bank: উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কর সংস্কারে সহায়তা করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারণা:

• কর স্বর্গ (Tax Haven): যে সকল দেশে করের হার কম এবং গোপনীয়তা বেশি, সেখানে অবৈধভাবে অর্থ জমা রাখা হয়। পনামা পেপারস এই বিষয়ে একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
• ব্ল্যাক লিস্ট (Black List): যে সকল দেশ কর ফাঁকি রোধে সহযোগিতা করে না, তাদের তালিকা।
• হোয়াইট লিস্ট (White List): যে সকল দেশ কর ফাঁকি রোধে সহযোগিতা করে, তাদের তালিকা।

ডিজিটাল অর্থনীতির উপর কর: ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারের সাথে সাথে নতুন কর সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। ডিজিটাল কোম্পানিগুলোর ভৌগোলিক অবস্থান নির্ধারণ করা কঠিন এবং তারা সহজেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে কার্যক্রম স্থানান্তর করতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে OECD একটি নতুন প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ করছে, যেখানে ডিজিটাল কোম্পানিগুলোর উপর একটি নির্দিষ্ট হারে কর আরোপ করার কথা বলা হয়েছে। ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বিভিন্ন দেশের কর ব্যবস্থা:

• মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: এখানকার কর ব্যবস্থা জটিল এবং বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত। কর্পোরেট ট্যাক্স এবং ব্যক্তিগত আয়করের হার উল্লেখযোগ্য।
• যুক্তরাজ্য: এখানে কর্পোরেট ট্যাক্স তুলনামূলকভাবে কম এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ অনুকূল।
• চীন: বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ায় চীনের কর ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
• জার্মানি: ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে জার্মানির কর কাঠামো বেশ স্থিতিশীল।
• ভারত: ভারতে কর কাঠামো পরিবর্তনশীল এবং সরকারের নীতি অনুযায়ী প্রায়ই পরিবর্তিত হয়। ভারতীয় অর্থনীতির উপর এর প্রভাব রয়েছে।

আন্তর্জাতিক কর পরিকল্পনা: আন্তর্জাতিক কর পরিকল্পনা একটি জটিল প্রক্রিয়া। ব্যক্তি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উভয়েরই উচিত একজন অভিজ্ঞ কর পরামর্শকের সাহায্য নেয়া। একটি সঠিক কর পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে করের বোঝা কমানো এবং আইনগত জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ: আন্তর্জাতিক কর সংক্রান্ত জটিলতা নিরুপণে বিভিন্ন টেকনিক্যাল এবং ভলিউম বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

১. স্থানান্তন মূল্য বিশ্লেষণ (Transfer Pricing Analysis): আন্তঃশাখা লেনদেনের মূল্য নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। ২. দেশ ঝুঁকি মূল্যায়ন (Country Risk Assessment): বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। ৩. কার্যকর কর হার বিশ্লেষণ (Effective Tax Rate Analysis): বিভিন্ন দেশের কর হারের তুলনামূলক বিশ্লেষণ। ৪. ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ কস্ট (VWAP): শেয়ার বাজারের লেনদেনের পরিমাণ এবং মূল্যের উপর ভিত্তি করে কর পরিকল্পনা। ৫. মুভিং এভারেজ (Moving Average): সময়ের সাথে সাথে করের হারের পরিবর্তন বিশ্লেষণ। ৬. রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (RSI): কর সংক্রান্ত বাজারের গতিবিধি পরিমাপ। ৭. MACD (Moving Average Convergence Divergence): করের প্রবণতা নির্ধারণ। ৮. বলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands): বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ। ৯. ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর নির্ধারণ। ১০. ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Pattern): বাজারের গতিবিধি এবং প্রবণতা সনাক্তকরণ। ১১. চার্ট প্যাটার্ন (Chart Pattern): বাজারের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা। ১২. টাইম সিরিজ বিশ্লেষণ (Time Series Analysis): সময়ের সাথে সাথে করের ডেটা বিশ্লেষণ। ১৩. রিগ্রেশন বিশ্লেষণ (Regression Analysis): করের হারের উপর প্রভাব বিস্তারকারী কারণগুলো নির্ণয়। ১৪. Monte Carlo Simulation: বিভিন্ন পরিস্থিতিতে করের ঝুঁকি মূল্যায়ন। ১৫. ডেটা মাইনিং (Data Mining): কর সংক্রান্ত ডেটা থেকে মূল্যবান তথ্য উদ্ধার।

উপসংহার: আন্তর্জাতিক কর একটি জটিল এবং পরিবর্তনশীল বিষয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এর সঠিক জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। দ্বৈত কর ব্যবস্থা, কর ফাঁকি এবং ডিজিটাল অর্থনীতির উপর কর আরোপের মতো চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সমন্বিত নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ