Trading Cognitive Biases

ট্রেডিং জ্ঞানীয় পক্ষপাত

ভূমিকা

ট্রেডিং বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, মানুষ প্রায়শই আবেগ এবং মানসিক প্রবণতা দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই মানসিক প্রবণতাগুলোকে জ্ঞানীয় পক্ষপাত বলা হয়। এই পক্ষপাতগুলি যুক্তিবোধ এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে, যার ফলে আর্থিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মতো দ্রুতগতির এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাজারে, এই পক্ষপাতগুলো বিশেষভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। এই নিবন্ধে, ট্রেডিংয়ের সময় বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করে এমন কিছু সাধারণ জ্ঞানীয় পক্ষপাত নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং সেগুলো থেকে বাঁচার উপায় বাতলে দেওয়া হবে।

জ্ঞানীয় পক্ষপাত কী?

জ্ঞানীয় পক্ষপাত হলো মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার প্রক্রিয়ার মধ্যেকার এমন কিছু ভুল যা আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করে। এগুলো কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় না, বরং আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, বিশ্বাস এবং আবেগের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই পক্ষপাতগুলি আমাদের তথ্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করতে, ভুল সিদ্ধান্ত নিতে এবং অযৌক্তিক ঝুঁকি নিতে উৎসাহিত করতে পারে।

ট্রেডিংয়ে সাধারণ জ্ঞানীয় পক্ষপাতসমূহ

১. নিশ্চিতকরণ পক্ষপাত (Confirmation Bias):

এটা হলো নিজের বিশ্বাসকে সমর্থন করে এমন তথ্য খোঁজা এবং তার বাইরের তথ্যগুলোকে উপেক্ষা করা। একজন ট্রেডার যদি মনে করেন একটি নির্দিষ্ট স্টক বাড়বে, তাহলে তিনি সেই সম্পর্কিত ইতিবাচক খবরগুলোই বেশি দেখবেন এবং নেতিবাচক খবরগুলো এড়িয়ে যাবেন। এর ফলে তিনি বাস্তবতার সম্পূর্ণ চিত্র দেখতে পান না এবং ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

২. উপলব্ধতার হিউরিস্টিক (Availability Heuristic):

এই পক্ষপাত অনুযায়ী, আমাদের স্মৃতিতে সহজে আসা তথ্যগুলোর উপর আমরা বেশি গুরুত্ব দেই। সম্প্রতি কোনো স্টক নিয়ে ভালো খবর শুনলে, একজন ট্রেডার মনে করতে পারেন যে স্টকটি বিনিয়োগের জন্য ভালো, যদিও দীর্ঘমেয়াদী বিশ্লেষণ ভিন্ন কিছু নির্দেশ করে। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

৩. অ্যাঙ্করিং পক্ষপাত (Anchoring Bias):

যখন আমরা কোনো তথ্যের প্রথম অংশের উপর বেশি নির্ভর করি এবং পরবর্তী তথ্যগুলো সেটিকে ভিত্তি করে মূল্যায়ন করি, তখন অ্যাঙ্করিং পক্ষপাত দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো স্টক আগে ১০০ টাকায় ছিল এবং এখন ৯০ টাকায় নেমে আসে, তাহলে একজন ট্রেডার এটিকে সস্তা মনে করতে পারেন, যদিও এর প্রকৃত মূল্য আরও কম হতে পারে। ভ্যালুয়েশন এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

৪. ক্ষতির অপচয় (Loss Aversion):

মানুষ সাধারণত লাভের চেয়ে ক্ষতির অনুভূতি বেশি তীব্রভাবে অনুভব করে। এই কারণে, ট্রেডাররা প্রায়শই তাদের убытокগুলো আটকানোর জন্য অযৌক্তিক পদক্ষেপ নেয়, যেমন - লোকসানে থাকা স্টক বিক্রি করতে দেরি করা। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে।

৫. অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস (Overconfidence Bias):

অনেক ট্রেডার তাদের দক্ষতা এবং জ্ঞানের উপর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হন। তারা মনে করেন যে তারা বাজারের গতিবিধি সঠিকভাবেPredict করতে পারবেন এবং সফল ট্রেড করতে পারবেন। এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস তাদের বেশি ঝুঁকি নিতে উৎসাহিত করে এবং ক্ষতির কারণ হতে পারে। পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন এক্ষেত্রে সহায়ক।

৬. Herd Mentality (দলবদ্ধ মানসিকতা):

অন্যান্য ট্রেডাররা কী করছে, তা দেখে প্রভাবিত হয়ে ট্রেড করাকে Herd Mentality বলে। যখন সবাই একটি নির্দিষ্ট স্টক কেনা শুরু করে, তখন একজন ট্রেডারও সেই স্টকে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হতে পারেন, এমনকি যদি তার নিজের বিশ্লেষণ ভিন্ন হয়। ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

৭. ফ্রেম প্রভাব (Framing Effect):

একই তথ্য বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হলে, আমাদের সিদ্ধান্ত ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি বিনিয়োগের লাভের সম্ভাবনা ৮০% বলা হলে, সেটি বেশি আকর্ষণীয় মনে হতে পারে, যদিও ক্ষতির সম্ভাবনা ২০% রয়েছে।

৮. পশ্চাৎদৃষ্টি পক্ষপাত (Hindsight Bias):

কোনো ঘটনার পরে, আমরা মনে করি যে আমরা আগে থেকেই জানতাম যে এটি ঘটবে। এই পক্ষপাত ট্রেডারদের অতীত ট্রেড থেকে ভুল শিক্ষা নিতে উৎসাহিত করে এবং ভবিষ্যতে একই ভুল করার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

৯. মুদ্রা বিভ্রম (Money Illusion):

nominal value-এর উপর বেশি মনোযোগ দেওয়া এবং মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবকে উপেক্ষা করাকে মুদ্রা বিভ্রম বলে।

১০. সুযোগ ব্যয় উপেক্ষা করা (Ignoring Opportunity Cost):

কোনো একটি বিনিয়োগে অর্থ আটকে রাখলে, অন্য লাভজনক সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই সুযোগ ব্যয় অনেক ট্রেডার উপেক্ষা করেন।

১১. স্ট্যাটাস কো পক্ষপাত (Status Quo Bias):

মানুষ সাধারণত তাদের বর্তমান অবস্থাতেই থাকতে পছন্দ করে এবং পরিবর্তনকে ভয় পায়। এই কারণে, ট্রেডাররা তাদের বিনিয়োগ পোর্টফোলিওতে পরিবর্তন করতে দ্বিধা বোধ করেন, এমনকি যখন ভালো সুযোগ আসে তখনও।

১২. ফলাফল পক্ষপাত (Outcome Bias):

কোনো সিদ্ধান্তের ফলাফল ভালো হলে, আমরা সেই সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করি, এমনকি যদি সিদ্ধান্তটি ভুল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেওয়া হয়ে থাকে।

১৩. নিয়ন্ত্রণ বিভ্রম (Illusion of Control):

ট্রেডাররা প্রায়শই মনে করেন যে তারা বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন, যা একটি ভুল ধারণা।

১৪. প্রত্যাশার পক্ষপাত (Expectation Bias):

আমাদের প্রত্যাশা আমাদের উপলব্ধি এবং সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।

১৫. প্রজ্ঞা বিভ্রম (Expertise Illusion):

নিজেকে বিশেষজ্ঞ মনে করা এবং অন্যদের মতামতকে উপেক্ষা করা।

১৬. রেডিয়েশন প্রভাব (Halo Effect):

একটি ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সামগ্রিক মূল্যায়ন করা।

১৭. নেতিবাচকতা bias (Negativity Bias):

নেতিবাচক তথ্যের প্রতি বেশি মনোযোগ দেওয়া।

১৮. বর্তমান bias (Present Bias):

ভবিষ্যতের চেয়ে বর্তমানের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া।

১৯. Endowment Effect:

কোনো জিনিসের মালিক হওয়ার পরে তার মূল্য বেশি মনে করা।

২০. Decoy Effect:

একটি তৃতীয় বিকল্প যোগ করে পছন্দের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করা।

জ্ঞানীয় পক্ষপাত থেকে বাঁচার উপায়

১. সচেতনতা বৃদ্ধি:

নিজের জ্ঞানীয় পক্ষপাত সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রথম পদক্ষেপ। ট্রেডিংয়ের সময় নিজের চিন্তা এবং সিদ্ধান্তগুলো বিশ্লেষণ করুন এবং দেখুন কোনো পক্ষপাত কাজ করছে কিনা।

২. সুনির্দিষ্ট ট্রেডিং পরিকল্পনা:

একটি সুস্পষ্ট ট্রেডিং পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং সেটি কঠোরভাবে অনুসরণ করুন। এই পরিকল্পনায় আপনার বিনিয়োগের লক্ষ্য, ঝুঁকি সহনশীলতা এবং ট্রেডিং কৌশল স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।

৩. আবেগ নিয়ন্ত্রণ:

ট্রেডিংয়ের সময় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। ভয়, লোভ এবং অনুশোচনা - এই আবেগগুলো আপনার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা এক্ষেত্রে জরুরি।

৪. তথ্য যাচাই:

বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন এবং সেগুলোকে যাচাই করুন। শুধুমাত্র একটি উৎসের উপর নির্ভর করবেন না।

৫. অন্যের মতামত গ্রহণ:

অন্যান্য অভিজ্ঞ ট্রেডারদের মতামত নিন এবং তাদের পরামর্শ বিবেচনা করুন।

৬. জার্নাল তৈরি:

আপনার ট্রেডিং কার্যক্রমের একটি জার্নাল তৈরি করুন। প্রতিটি ট্রেডের কারণ, ফলাফল এবং আপনার মানসিক অবস্থা লিপিবদ্ধ করুন। এটি আপনাকে আপনার ভুলগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।

৭. ছোট পরিসরে শুরু:

বড় বিনিয়োগ করার আগে ছোট পরিসরে ট্রেডিং শুরু করুন। এটি আপনাকে ঝুঁকি কমাতে এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সাহায্য করবে।

৮. নিয়মিত বিরতি:

ট্রেডিংয়ের সময় নিয়মিত বিরতি নিন। এটি আপনাকে মানসিক চাপ কমাতে এবং আরও ভালোভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করবে।

৯. শিক্ষার প্রসার:

ট্রেডিং এবং বিনিয়োগ সম্পর্কে আপনার জ্ঞান বাড়াতে থাকুন। নতুন কৌশল এবং পদ্ধতি শিখুন। ফিনান্সিয়াল লিটারেসি এক্ষেত্রে খুব দরকারি।

উপসংহার

ট্রেডিংয়ে জ্ঞানীয় পক্ষপাত একটি বড় সমস্যা। এই পক্ষপাতগুলো থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতা, সঠিক পরিকল্পনা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। নিয়মিত অনুশীলন এবং শিক্ষার মাধ্যমে, আপনি আপনার ট্রেডিং দক্ষতা উন্নত করতে পারেন এবং আর্থিক সাফল্য অর্জন করতে পারেন।

আরও জানতে:

• টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর
• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
• ঝুঁকি-রিটার্ন অনুপাত
• মার্কেট সেন্টিমেন্ট
• বাইনারি অপশন কৌশল
• অপশন ট্রেডিং
• ফরেক্স ট্রেডিং
• স্টক মার্কেট
• মিউচুয়াল ফান্ড
• বন্ড মার্কেট
• ইটিএফ
• ডেরিভেটিভস
• ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স
• পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট
• অর্থনৈতিক সূচক
• ট্রেডিং মনোবিজ্ঞান
• ভলিউম মূল্য বিশ্লেষণ
• Elliott Wave Theory
• Fibonacci Retracement
• Moving Averages

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ