Procurement

প্রক্রিয়া সংগ্রহ : একটি বিস্তারিত আলোচনা

প্রক্রিয়া সংগ্রহ বা Procurement হল কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য, পরিষেবা এবং কাজগুলি ক্রয় করার সামগ্রিক প্রক্রিয়া। এটি শুধু কেনাকাটার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং একটি জটিল প্রক্রিয়া যেখানে চাহিদা চিহ্নিত করা থেকে শুরু করে সরবরাহকারীর নির্বাচন, দর কষাকষি, চুক্তি সম্পাদন, পণ্য বা পরিষেবা গ্রহণ এবং পেমেন্ট সম্পন্ন করা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায় অন্তর্ভুক্ত। দক্ষ প্রক্রিয়া সংগ্রহ একটি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা-এর (Supply Chain Management) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা খরচ কমাতে, গুণমান নিশ্চিত করতে এবং সময় মতো পণ্য ও পরিষেবা পেতে সহায়ক।

প্রক্রিয়া সংগ্রহের মূল পর্যায়

প্রক্রিয়া সংগ্রহ সাধারণত নিম্নলিখিত পর্যায়গুলির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়:

প্রক্রিয়া সংগ্রহের পর্যায়

পর্যায়

বিবরণ

চাহিদা চিহ্নিতকরণ

প্রতিষ্ঠানের কী প্রয়োজন তা নির্ধারণ করা। এই পর্যায়ে ব্যবহারকারীর চাহিদা, প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিবেচনা করা হয়। চাহিদা পরিকল্পনা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। |

স্পেসিফিকেশন তৈরি

সরবরাহকারী নির্বাচন

উপযুক্ত সরবরাহকারী খুঁজে বের করা এবং তাদের যোগ্যতা যাচাই করা। এক্ষেত্রে সরবরাহকারী মূল্যায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। |

দরপত্র আহ্বান

সরবরাহকারীদের কাছ থেকে প্রস্তাবনা (Proposal) বা কোটেশন (Quotation) আহ্বান করা। ই-প্রকিউরমেন্ট এই কাজে সাহায্য করতে পারে। |

প্রস্তাবনা মূল্যায়ন

প্রাপ্ত প্রস্তাবনাগুলির মধ্যে তুলনা করে সেরা প্রস্তাবটি নির্বাচন করা। মূল্য বিশ্লেষণ এখানে গুরুত্বপূর্ণ। |

দর কষাকষি

চুক্তি সম্পাদন

চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করা এবং সরবরাহকারীর সাথে একটি আইনি সম্পর্ক স্থাপন করা। চুক্তি ব্যবস্থাপনা এই পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ। |

পণ্য বা পরিষেবা গ্রহণ

পেমেন্ট সম্পন্ন করা

সরবরাহকারীকে চুক্তিবদ্ধ শর্ত অনুযায়ী পেমেন্ট করা। ক্রয়াদেশ (Purchase Order) এবং ইনভয়েস (Invoice) এই ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। |

প্রক্রিয়া সংগ্রহের প্রকারভেদ

বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া সংগ্রহ পদ্ধতি প্রচলিত আছে, যা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়:

• সরাসরি ক্রয় (Direct Procurement): এক্ষেত্রে সরাসরি প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে পণ্য কেনা হয়।
• পরোক্ষ ক্রয় (Indirect Procurement): এক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিষেবা, যেমন - অফিস সরঞ্জাম, রক্ষণাবেক্ষণ পরিষেবা ইত্যাদি কেনা হয়।
• কৌশলগত সংগ্রহ (Strategic Sourcing): দীর্ঘমেয়াদী সরবরাহ সম্পর্ক তৈরি এবং খরচ কমানোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। কৌশলগত পরিকল্পনা এক্ষেত্রে অপরিহার্য।
• বৈশ্বিক সংগ্রহ (Global Sourcing): বিশ্বব্যাপী সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পণ্য বা পরিষেবা সংগ্রহ করা।
• ই-প্রকিউরমেন্ট (E-Procurement): অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা।

আধুনিক প্রক্রিয়া সংগ্রেহের প্রবণতা

আধুনিক প্রক্রিয়া সংগ্রহে বেশ কিছু নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে:

• ডিজিটালাইজেশন (Digitalization): ক্রয় প্রক্রিয়াকে স্বয়ংক্রিয় করতে আরপিএ (Robotic Process Automation) এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) ব্যবহার করা হচ্ছে।
• ডেটা বিশ্লেষণ (Data Analytics): ক্রয় সংক্রান্ত ডেটা বিশ্লেষণ করে খরচ কমানোর সুযোগ খুঁজে বের করা এবং সরবরাহকারীদের কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করা। বিগ ডেটা এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management): সরবরাহ শৃঙ্খলে সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করা এবং তা কমানোর জন্য পরিকল্পনা করা। সরবরাহ শৃঙ্খল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
• টেকসই সংগ্রহ (Sustainable Procurement): পরিবেশ এবং সমাজের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন পণ্য ও পরিষেবা সংগ্রহ করা। সবুজ ক্রয় (Green Procurement) এর একটি উদাহরণ।
• সরবরাহকারীর সাথে সহযোগিতা (Supplier Collaboration): সরবরাহকারীদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক তৈরি করে উদ্ভাবন এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

প্রক্রিয়া সংগ্রেহে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি

প্রক্রিয়া সংগ্রহকে আরও দক্ষ এবং কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়:

• ইআরপি সিস্টেম (ERP System): এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং সিস্টেম, যা ক্রয় প্রক্রিয়া সহ প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কার্যক্রমকে ஒருங்கிணைিত করে।
• এসআরএম সফটওয়্যার (SRM Software): সরবরাহকারী সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার, যা সরবরাহকারীদের সাথে সম্পর্ক উন্নত করতে সাহায্য করে।
• ই-অকশন প্ল্যাটফর্ম (E-Auction Platform): অনলাইনে নিলামের মাধ্যমে সেরা দাম পেতে সাহায্য করে।
• ক্রয় কার্ড (Purchasing Card): ছোটখাটো কেনাকাটার জন্য ব্যবহৃত হয়।
• ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (Inventory Management System): ইনভেন্টরি নিয়ন্ত্রণ এবং অপটিমাইজ করতে সাহায্য করে।

প্রক্রিয়া সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ

প্রক্রিয়া সংগ্রহে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যা মোকাবেলা করা প্রয়োজন:

• খরচ নিয়ন্ত্রণ (Cost Control): বাজারের অস্থিরতা এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে খরচ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে। খরচ সাশ্রয় কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন।
• গুণমান নিশ্চিতকরণ (Quality Assurance): নিম্নমানের পণ্য বা পরিষেবা গ্রহণের ঝুঁকি থাকে। গুণমান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত।
• সরবরাহ শৃঙ্খল ঝুঁকি (Supply Chain Risk): প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা অন্য কোনো কারণে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হতে পারে।
• যোগাযোগের অভাব (Lack of Communication): সরবরাহকারী এবং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগাযোগের অভাবে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে।
• প্রযুক্তিগত জটিলতা (Technological Complexity): নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার অভাব থাকতে পারে।

প্রক্রিয়া সংগ্রহ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত ক্ষেত্র

প্রক্রিয়া সংগ্রহ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো:

• ফাইন্যান্স (Finance): বাজেট তৈরি, পেমেন্ট প্রক্রিয়া এবং খরচ বিশ্লেষণ।
• অ্যাকাউন্টিং (Accounting): ক্রয় সংক্রান্ত লেনদেন রেকর্ড করা এবং আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করা।
• লজিস্টিকস (Logistics): পণ্য পরিবহন এবং বিতরণ।
• গুণমান ব্যবস্থাপনা (Quality Management): পণ্য বা পরিষেবার গুণমান নিশ্চিত করা।
• আইন (Law): চুক্তি সম্পাদন এবং আইনি জটিলতা মোকাবেলা করা।
• মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা (Human Resource Management): সরবরাহকারী নির্বাচন এবং সম্পর্ক ব্যবস্থাপনার জন্য দক্ষ কর্মী নিয়োগ করা।
• বিপণন (Marketing): বাজারের চাহিদা এবং সরবরাহকারীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা।
• উৎপাদন (Production): কাঁচামাল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করা।
• প্রকল্প ব্যবস্থাপনা (Project Management): প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবা সময় মতো সংগ্রহ করা।
• তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology): ই-প্রকিউরমেন্ট সিস্টেম এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সমাধান ব্যবহার করা।

কৌশলগত সংগ্রহ (Strategic Sourcing)

কৌশলগত সংগ্রহ একটি দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি, যেখানে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক খরচ কমানো এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের কার্যকারিতা বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে:

• ব্যয় বিশ্লেষণ (Spend Analysis): প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটার ধরণ এবং খরচ বিশ্লেষণ করা।
• বাজার গবেষণা (Market Research): সরবরাহকারীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা।
• সরবরাহকারী নির্বাচন (Supplier Selection): সেরা সরবরাহকারীদের নির্বাচন করা এবং তাদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক স্থাপন করা।
• দর কষাকষি (Negotiation): সরবরাহকারীদের সাথে দাম এবং শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করা।
• চুক্তি ব্যবস্থাপনা (Contract Management): চুক্তির শর্তাবলী সঠিকভাবে পালন করা এবং ঝুঁকি কমানো।

কৌশলগত সংগ্রহের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান তার প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা (Competitive Advantage) তৈরি করতে পারে।

ই-প্রকিউরমেন্ট (E-Procurement)

ই-প্রকিউরমেন্ট হল অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পণ্য ও পরিষেবা কেনার প্রক্রিয়া। এটি ক্রয় প্রক্রিয়াকে সহজ, দ্রুত এবং স্বচ্ছ করে তোলে। ই-প্রকিউরমেন্টের সুবিধাগুলো হলো:

• খরচ সাশ্রয় (Cost Savings): স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রশাসনিক খরচ কমানো যায়।
• সময় সাশ্রয় (Time Savings): কাগজপত্রের ব্যবহার কমিয়ে এবং প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করে সময় বাঁচানো যায়।
• স্বচ্ছতা বৃদ্ধি (Increased Transparency): সমস্ত লেনদেন অনলাইনে রেকর্ড করা থাকে, যা স্বচ্ছতা বাড়ায়।
• দক্ষতা বৃদ্ধি (Improved Efficiency): স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজের দক্ষতা বাড়ে।
• যোগাযোগ উন্নত (Improved Communication): সরবরাহকারীদের সাথে সহজে যোগাযোগ করা যায়।

ই-প্রকিউরমেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলি সাধারণত আরএফকিউ (Request for Quotation), আরএফপি (Request for Proposal) এবং ই-অকশন (E-Auction) এর মতো সরঞ্জাম সরবরাহ করে।

উপসংহার

প্রক্রিয়া সংগ্রহ একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে একটি প্রতিষ্ঠান তার ক্রয় প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করতে পারে এবং খরচ কমাতে পারে। সরবরাহকারীদের সাথে সহযোগিতা এবং টেকসই সংগ্রহের উপর জোর দেওয়া ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ