Microsoft

মাইক্রোসফট: একটি বিস্তারিত আলোচনা

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

মাইক্রোসফট কর্পোরেশন একটি বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি। এটি কম্পিউটার সফটওয়্যার, কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং সম্পর্কিত পরিষেবা তৈরি, লাইসেন্স, সমর্থন ও বিক্রি করে। বিল গেটস এবং পল অ্যালেন ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন। বিল গেটস-এর নেতৃত্বে কোম্পানিটি ব্যক্তিগত কম্পিউটারের জগতে বিপ্লব এনেছে এবং বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান কোম্পানি হিসেবে পরিচিত। মাইক্রোসফটের সদর দপ্তর ওয়াশিংটন রাজ্যের রেডমন্ড শহরে অবস্থিত।

ইতিহাস

মাইক্রোসফটের যাত্রা শুরু হয় Altair 8800 নামক একটি কম্পিউটারের জন্য BASIC ইন্টারপ্রেটার লিখে। ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে, মাইক্রোসফট ডিস্ক অপারেটিং সিস্টেম (Disk Operating System) বা DOS তৈরি করে আইবিএমের (IBM) সাথে চুক্তি করে, যা দ্রুত শিল্প মানদণ্ডে পরিণত হয়। এই অপারেটিং সিস্টেমটি পরবর্তীকালে মাইক্রোসফট উইন্ডোজের ভিত্তি স্থাপন করে।

১৯৮০-এর দশক: এই দশকে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১.০ (Windows 1.0) প্রকাশ করে। এটি ছিল একটি গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (Graphical User Interface), যা কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এরপর উইন্ডোজ ২.০, ৩.০ এবং ৩.১ সংস্করণগুলো প্রকাশিত হয়, যা উইন্ডোজকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে।
১৯৯০-এর দশক: ১৯৯৫ সালে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৯৫ (Windows 95) প্রকাশ করে, যা কম্পিউটিংয়ের জগতে একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। এই সংস্করণে স্টার্ট মেনু এবং টাস্কবারের মতো নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা হয়। একই সময়ে, মাইক্রোসফট ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার (Internet Explorer) ওয়েব ব্রাউজারটিও বাজারে আনে, যা নেটসকেপ নেভিগেটর-এর সাথে প্রতিযোগিতায় নামে।
২০০০-এর দশক: এই দশকে মাইক্রোসফট Xbox গেম কনসোল এবং Office XP-এর মতো নতুন পণ্য বাজারে ছাড়ে। স্টিভ বলমার এই সময় মাইক্রোসফটের সিইও (CEO) ছিলেন।
২০১০-এর দশক: ২০১১ সালে স্যাটিয়া নাদেলা মাইক্রোসফটের সিইও হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের দিকে কোম্পানির মনোযোগ দেন। Azure ক্লাউড প্ল্যাটফর্মের উন্নয়ন এবং Office 365-এর (বর্তমানে Microsoft 365) সাফল্যের মাধ্যমে মাইক্রোসফট ক্লাউড বাজারে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করে।
বর্তমান: মাইক্রোসফট বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence), মিক্সড রিয়েলিটি এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে।

পণ্য এবং পরিষেবা

মাইক্রোসফট বিভিন্ন ধরনের পণ্য এবং পরিষেবা প্রদান করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

অপারেটিং সিস্টেম: উইন্ডোজ (Windows) মাইক্রোসফটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য। এটি ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং সার্ভারের জন্য ব্যবহৃত হয়। উইন্ডোজের বিভিন্ন সংস্করণ রয়েছে, যেমন উইন্ডোজ ১০, উইন্ডোজ ১১ ইত্যাদি।
অফিস স্যুট: মাইক্রোসফট অফিস (Microsoft Office) একটি বহুল ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন স্যুট। এর মধ্যে ওয়ার্ড (Word), এক্সেল (Excel), পাওয়ারপয়েন্ট (PowerPoint), আউটলুক (Outlook) এবং অন্যান্য প্রোগ্রাম অন্তর্ভুক্ত।
ক্লাউড কম্পিউটিং: মাইক্রোসফট অ্যাজুর (Microsoft Azure) একটি ক্লাউড কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম। এটি বিভিন্ন পরিষেবা সরবরাহ করে, যেমন ভার্চুয়াল মেশিন, ডেটাবেস এবং স্টোরেজ।
গেম কনসোল: এক্সবক্স (Xbox) মাইক্রোসফটের গেম কনসোল। এটি ভিডিও গেম খেলার জন্য ব্যবহৃত হয়।
সার্চ ইঞ্জিন: বিং (Bing) মাইক্রোসফটের সার্চ ইঞ্জিন। এটি গুগল (Google)-এর সাথে প্রতিযোগিতা করে।
সামাজিক মাধ্যম: লিঙ্কডইন (LinkedIn) একটি পেশাদার সামাজিক নেটওয়ার্ক। মাইক্রোসফট ২০১৭ সালে লিঙ্কডইন কিনে নেয়।
অন্যান্য: মাইক্রোসফট এর বাইরেও স্কাইপ (Skype), জুম (Zoom) এর মত বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম, এবং ভিজ্যুয়াল স্টুডিও (Visual Studio) এর মত প্রোগ্রামিং টুল সরবরাহ করে।

মাইক্রোসফটের ব্যবসায়িক মডেল

মাইক্রোসফটের ব্যবসায়িক মডেল মূলত লাইসেন্সিং, সাবস্ক্রিপশন এবং বিজ্ঞাপন এই তিনটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে গঠিত।

লাইসেন্সিং: মাইক্রোসফট তার অপারেটিং সিস্টেম এবং অন্যান্য সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স বিক্রি করে।
সাবস্ক্রিপশন: মাইক্রোসফট ৩৬৫ (Microsoft 365)-এর মতো সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক পরিষেবা প্রদান করে, যেখানে ব্যবহারকারীরা মাসিক বা বার্ষিক ফি প্রদানের মাধ্যমে সফটওয়্যার এবং ক্লাউড পরিষেবা ব্যবহার করতে পারেন।
বিজ্ঞাপন: বিং (Bing) সার্চ ইঞ্জিন এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মাইক্রোসফট বিজ্ঞাপন থেকে আয় করে।

পণ্য/পরিষেবা	ব্যবসায়িক মডেল	উইন্ডোজ	লাইসেন্সিং	মাইক্রোসফট অফিস	লাইসেন্সিং ও সাবস্ক্রিপশন	মাইক্রোসফট অ্যাজুর	সাবস্ক্রিপশন	এক্সবক্স	হার্ডওয়্যার বিক্রয় ও গেম সাবস্ক্রিপশন	বিং	বিজ্ঞাপন	লিঙ্কডইন	বিজ্ঞাপন ও প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন

মাইক্রোসফট বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:

ডিরেক্টএক্স (DirectX): এটি গেম ডেভেলপারদের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (API)।
.NET ফ্রেমওয়ার্ক: এটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরির জন্য একটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক।
ট্রান্সফরমার (Transformer): এটি একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার, যা প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণে (Natural Language Processing) ব্যবহৃত হয়।
হলোলেন্স (HoloLens): এটি একটি মিক্সড রিয়েলিটি হেডসেট।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং: মাইক্রোসফট কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের উপর গবেষণা করছে এবং Azure Quantum নামক একটি ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে।

মাইক্রোসফটের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

মাইক্রোসফট বর্তমানে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে মনোযোগ দিচ্ছে:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI): মাইক্রোসফট এআই প্রযুক্তির উন্নয়নে প্রচুর বিনিয়োগ করছে এবং এটিকে তাদের বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবার সাথে যুক্ত করছে।
ক্লাউড কম্পিউটিং: অ্যাজুর (Azure)-কে আরও উন্নত এবং বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে মাইক্রোসফটের।
মিক্সড রিয়েলিটি: হলোলেন্স (HoloLens)-এর মাধ্যমে মিক্সড রিয়েলিটি প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টা করছে মাইক্রোসফট।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং: কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে নিজেদের নেতৃত্ব বজায় রাখার জন্য মাইক্রোসফট গবেষণা ও উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
গেম ডেভেলপমেন্ট: গেম পাসের (Game Pass) মাধ্যমে আরও বেশি গেমারদের আকৃষ্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে।

মাইক্রোসফটের চ্যালেঞ্জসমূহ

মাইক্রোসফটকে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:

প্রতিযোগিতা: গুগল, অ্যামাজন, অ্যাপল এবং অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সাথে তীব্র প্রতিযোগিতা।
সাইবার নিরাপত্তা: সাইবার আক্রমণ এবং ডেটা সুরক্ষার ঝুঁকি।
গোপনীয়তা: ব্যবহারকারীর ডেটা গোপনীয়তা রক্ষা করা।
অ্যান্টিট্রাস্ট ইস্যু: বিভিন্ন দেশে মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে অ্যান্টিট্রাস্ট (Antitrust) তদন্ত চলছে।
দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি: প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তিত হওয়ায় নতুন উদ্ভাবনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা।

মাইক্রোসফটের অবদান

মাইক্রোসফট প্রযুক্তি বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এটি কম্পিউটারকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করেছে এবং ডিজিটাল বিপ্লবে সহায়তা করেছে। মাইক্রোসফটের তৈরি করা সফটওয়্যার এবং পরিষেবাগুলি শিক্ষা, ব্যবসা এবং বিনোদন সহ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও, মাইক্রোসফট বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজেও জড়িত।

আরও কিছু বিষয়

মাইক্রোসফটের কর্পোরেট সংস্কৃতি কর্মীদের উদ্ভাবনী এবং সহযোগী হতে উৎসাহিত করে।
কোম্পানিটি পরিবেশ সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মাইক্রোসফট তার কর্মীদের এবং সমাজের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করে।
মাইক্রোসফটের গবেষণা এবং উদ্ভাবন কেন্দ্রগুলো বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত।

অভ্যন্তরীণ লিঙ্ক

কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন : শেয়ার বাজারের গতিবিধি বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মুভিং এভারেজ : ঐতিহাসিক ডেটার উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ প্রবণতা নির্ণয়।
আরএসআই (Relative Strength Index) : শেয়ারের অতিরিক্ত কেনা বা বিক্রির চাপ পরিমাপ করে।
এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence) : দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে।
বলিঙ্গার ব্যান্ড : শেয়ারের দামের অস্থিরতা পরিমাপ করে।
ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট : সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল চিহ্নিত করে।
ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP) : একটি নির্দিষ্ট সময়কালে গড় মূল্য এবং ভলিউম বিশ্লেষণ করে।
অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) : ভলিউম এবং দামের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে।
একিউমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন : শেয়ারের চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে ভারসাম্য বিশ্লেষণ করে।
প্যারাবোলিক সার (Parabolic SAR) : সম্ভাব্য ট্রেন্ড পরিবর্তন চিহ্নিত করে।
স্টোকাস্টিক অসিলেটর : দামের গতিবিধি এবং মোমেন্টাম পরিমাপ করে।
হিস্তোগ্রাম : ডেটার ফ্রিকোয়েন্সি বিতরণ দেখায়।
রেঞ্জ চার্ট : নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দামের পরিসর প্রদর্শন করে।
পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্ট : দামের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করে।
ওয়েভ থিওরি : বাজারের গতিবিধিকে প্যাটার্ন আকারে বিশ্লেষণ করে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ