অপশন বিক্রি করার সময়
অপশন বিক্রি করার সময়
অপশন ট্রেডিং একটি জটিল আর্থিক কৌশল, যেখানে বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মূল্যে কোনো সম্পদ কেনা বা বেচার অধিকার পান, কিন্তু বাধ্য থাকেন না। অপশন বিক্রি করা এই ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই নিবন্ধে, অপশন বিক্রি করার সময়, কৌশল, ঝুঁকি এবং সম্ভাব্য লাভ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
অপশন বিক্রির প্রাথমিক ধারণা
অপশন বিক্রি করার অর্থ হলো, কোনো অপশন ক্রেতার কাছে সেই অপশনের বাধ্যবাধকতা গ্রহণ করা। এর মাধ্যমে অপশন বিক্রেতা একটি নির্দিষ্ট প্রিমিয়াম আয় করেন। অপশন দুই ধরনের হতে পারে: কল অপশন (Call Option) এবং পুট অপশন (Put Option)।
- কল অপশন বিক্রি (Selling Call Option): যখন একজন বিনিয়োগকারী মনে করেন যে কোনো সম্পদের দাম একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়বে না, তখন তিনি কল অপশন বিক্রি করেন। এক্ষেত্রে, তিনি অপশন ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট মূল্যে (স্ট্রাইক প্রাইস) একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদটি কেনার অধিকার দেন। যদি দাম স্ট্রাইক প্রাইসের নিচে থাকে, তবে অপশনটি মূল্যহীন হয়ে যায় এবং বিক্রেতা প্রিমিয়াম লাভ করেন। যদি দাম স্ট্রাইক প্রাইসের উপরে চলে যায়, তবে বিক্রেতাকে সেই দামে সম্পদটি বিক্রি করতে হতে পারে, যা তার জন্য লোকসানের কারণ হতে পারে। কল অপশন
- পুট অপশন বিক্রি (Selling Put Option): যখন একজন বিনিয়োগকারী মনে করেন যে কোনো সম্পদের দাম একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমবে না, তখন তিনি পুট অপশন বিক্রি করেন। এক্ষেত্রে, তিনি অপশন ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট মূল্যে (স্ট্রাইক প্রাইস) একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদটি বিক্রি করার অধিকার দেন। যদি দাম স্ট্রাইক প্রাইসের উপরে থাকে, তবে অপশনটি মূল্যহীন হয়ে যায় এবং বিক্রেতা প্রিমিয়াম লাভ করেন। যদি দাম স্ট্রাইক প্রাইসের নিচে চলে যায়, তবে বিক্রেতাকে সেই দামে সম্পদটি কিনতে হতে পারে, যা তার জন্য লোকসানের কারণ হতে পারে। পুট অপশন
অপশন বিক্রির প্রকারভেদ
অপশন বিক্রির বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীরা তাদের কৌশল এবং ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকার আলোচনা করা হলো:
১. কাভার্ড কল (Covered Call): এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় অপশন বিক্রির কৌশলগুলির মধ্যে একটি। এখানে, বিনিয়োগকারী প্রথমে অন্তর্নিহিত সম্পদ (Underlying Asset) কেনেন এবং তারপর সেই সম্পদের উপর একটি কল অপশন বিক্রি করেন। এটি প্রিমিয়াম আয়ের একটি স্থিতিশীল উৎস তৈরি করে। কাভার্ড কল
২. নেaked পুট (Naked Put): এই কৌশলে, বিনিয়োগকারী কোনো অন্তর্নিহিত সম্পদ না রেখেই পুট অপশন বিক্রি করেন। এটি ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ যদি সম্পদের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, তবে বিক্রেতাকে লোকসানের সম্মুখীন হতে হতে পারে। নেকেড পুট
৩. ক্যাশ-সিকিউরড পুট (Cash-Secured Put): এখানে, বিনিয়োগকারী পুট অপশন বিক্রি করার জন্য পর্যাপ্ত নগদ অর্থ আলাদা করে রাখেন। যদি অপশনটি প্রয়োগ করা হয়, তবে তিনি সেই নগদ অর্থ ব্যবহার করে সম্পদটি কিনতে প্রস্তুত থাকেন। ক্যাশ-সিকিউরড পুট
৪. আয়রন কন্ডোর (Iron Condor): এটি একটি নিরপেক্ষ কৌশল, যেখানে চারটি অপশন ব্যবহার করা হয় - দুটি কল অপশন এবং দুটি পুট অপশন। এই কৌশলটি কম অস্থির বাজারে লাভজনক। আয়রন কন্ডোর
৫. বাটারফ্লাই স্প্রেড (Butterfly Spread): এটিও একটি নিরপেক্ষ কৌশল, যেখানে তিনটি অপশন ব্যবহার করা হয়। এই কৌশলটি একটি নির্দিষ্ট দামের কাছাকাছি বাজারের অস্থিরতা থেকে লাভবান হওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। বাটারফ্লাই স্প্রেড
অপশন বিক্রির সময় বিবেচ্য বিষয়
অপশন বিক্রি করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা উচিত:
১. অন্তর্নিহিত সম্পদের বিশ্লেষণ: অপশন বিক্রি করার আগে, অন্তর্নিহিত সম্পদের মৌলিক এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ করা জরুরি। ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ এবং টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে সম্পদের ভবিষ্যৎ মূল্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
২. ঝুঁকির মূল্যায়ন: অপশন বিক্রির সাথে জড়িত ঝুঁকিগুলো ভালোভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। প্রতিটি কৌশলের নিজস্ব ঝুঁকি রয়েছে, তাই বিনিয়োগকারীকে তার ঝুঁকি সহনশীলতা অনুযায়ী কৌশল নির্বাচন করতে হবে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
৩. স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদকাল নির্বাচন: সঠিক স্ট্রাইক প্রাইস (Strike Price) এবং মেয়াদকাল (Expiration Date) নির্বাচন করা অপশন বিক্রির সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রাইক প্রাইস নির্ধারণ করার সময় বাজারের অস্থিরতা এবং নিজের প্রত্যাশা বিবেচনা করতে হবে। স্ট্রাইক প্রাইস
৪. প্রিমিয়াম সংগ্রহ: অপশন বিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রিমিয়াম বিনিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বেশি প্রিমিয়াম পাওয়ার জন্য, বিনিয়োগকারীকে ঝুঁকির মাত্রা এবং বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। প্রিমিয়াম
৫. মার্জিন প্রয়োজনীয়তা: অপশন বিক্রি করার জন্য ব্রোকারের কাছে মার্জিন (Margin) জমা দিতে হতে পারে। মার্জিন হলো বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টে থাকা সেই পরিমাণ অর্থ, যা সম্ভাব্য লোকসান কভার করতে ব্যবহৃত হয়। মার্জিন
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং অপশন বিক্রি
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ অপশন বিক্রির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল নির্দেশক (Technical Indicator) নিচে উল্লেখ করা হলো:
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): এটি বাজারের প্রবণতা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
- আরএসআই (RSI - Relative Strength Index): এটি সম্পদের অতিরিক্ত ক্রয় বা অতিরিক্ত বিক্রির অবস্থা নির্দেশ করে।
- এমএসিডি (MACD - Moving Average Convergence Divergence): এটি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক দেখায় এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সংকেত প্রদান করে।
- বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): এটি বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করে।
- ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): এটি সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর চিহ্নিত করে।
ভলিউম বিশ্লেষণ এবং অপশন বিক্রি
ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis) অপশন ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভলিউম হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো সম্পদের কতগুলো ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে তার পরিমাণ।
- ভলিউম স্পাইক (Volume Spike): যখন ভলিউম হঠাৎ করে বেড়ে যায়, তখন এটি একটি শক্তিশালী প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।
- অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV - On Balance Volume): এটি ভলিউমের উপর ভিত্তি করে বাজারের চাপ পরিমাপ করে।
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP - Volume Weighted Average Price): এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ট্রেড করা শেয়ারের গড় মূল্য দেখায়।
অপশন বিক্রির ঝুঁকি এবং সতর্কতা
অপশন বিক্রি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই বিনিয়োগকারীদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
- অপর্যাপ্ত মার্জিন: মার্জিন কল (Margin Call) এড়াতে পর্যাপ্ত মার্জিন বজায় রাখা জরুরি।
- ভুল স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন: ভুল স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন করলে বড় ধরনের লোকসান হতে পারে।
- সময়সীমা: অপশনের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার আগে বাজারের পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে, যা লোকসানের কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত ট্রেডিং: অতিরিক্ত ট্রেডিং বা লিভারেজ (Leverage) ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
- সংবাদ এবং ঘটনা: গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংবাদ এবং ঘটনা বাজারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
সফল অপশন বিক্রির জন্য টিপস
- একটি সুনির্দিষ্ট ট্রেডিং পরিকল্পনা তৈরি করুন।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়ম অনুসরণ করুন।
- বাজারের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকুন।
- ধৈর্য ধরে ট্রেড করুন এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন।
- নিজের দক্ষতা এবং জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।
উপসংহার
অপশন বিক্রি একটি জটিল কৌশল, তবে সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে এটি লাভজনক হতে পারে। বিনিয়োগকারীদের উচিত অপশন বিক্রির মৌলিক ধারণা, বিভিন্ন প্রকারভেদ, ঝুঁকি এবং সতর্কতা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে তারপর ট্রেডিং শুরু করা। নিয়মিত অনুশীলন, বাজারের বিশ্লেষণ এবং সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অপশন ট্রেডিংয়ে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
| ঝুঁকি | সম্ভাব্য লাভ | উপযুক্ত বাজার | | ||||
| কম | সীমিত | স্থিতিশীল বা সামান্য ঊর্ধ্বমুখী | | উচ্চ | উচ্চ | নিম্নমুখী | | মাঝারি | মাঝারি | স্থিতিশীল বা সামান্য নিম্নমুখী | | কম | সীমিত | কম অস্থির | | কম | সীমিত | কম অস্থির | |
আরও জানতে:
- অপশন ট্রেডিং
- ফিনান্সিয়াল ডেরিভেটিভস
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর
- ভলিউম প্রাইস ট্রেন্ড
- অপশন চেইন
- ইম্প্লাইড ভলাটিলিটি
- গ্রিকস (অপশন)
- মার্জিন অ্যাকাউন্ট
- ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম
- অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার
- শেয়ার বাজার
- বিনিয়োগ
- পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা
- স্টক
- বন্ড
- মিউচুয়াল ফান্ড
- ইটিএফ
- ফরেক্স ট্রেডিং
- ক্রিপ্টোকারেন্সি
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
