Reversal trading
রিভার্সাল ট্রেডিং : বাইনারি অপশনে সাফল্যের চাবিকাঠি
রিভার্সাল ট্রেডিং হলো বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। এই পদ্ধতিতে, একজন ট্রেডার বাজারের বর্তমান প্রবণতা (Trend) বিপরীত দিকে যাবে কিনা, তা অনুমান করার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ, যদি বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে, তবে রিভার্সাল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে ট্রেডার বাজারের পতন বা নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। একইভাবে, যদি বাজার নিম্নমুখী থাকে, তবে ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হয়। এই কৌশলটি সফল হওয়ার জন্য বাজারের গতিবিধি এবং বিভিন্ন টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন।
রিভার্সাল ট্রেডিংয়ের মূল ধারণা
রিভার্সাল ট্রেডিংয়ের মূল ধারণা হলো বাজারের গতিবিধি একটি নির্দিষ্ট সময় পর বিপরীত দিকে পরিবর্তিত হবে। এই পরিবর্তন বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন - অর্থনৈতিক খবর, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বাজারের নিজস্ব গতিবিধি। রিভার্সাল ট্রেডাররা এই পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন, ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন এবং টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করেন।
রিভার্সাল ট্রেডিংয়ের প্রকারভেদ
রিভার্সাল ট্রেডিং মূলত দুই প্রকার:
১. ট্রেন্ড রিভার্সাল (Trend Reversal): এই পদ্ধতিতে, একজন ট্রেডার দীর্ঘমেয়াদী বাজারের প্রবণতা পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি স্টক দীর্ঘ সময় ধরে বাড়ছে থাকে, তবে ট্রেন্ড রিভার্সাল ট্রেডাররা সেই স্টকটির পতন হওয়ার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন।
২. শর্ট-টার্ম রিভার্সাল (Short-term Reversal): এই পদ্ধতিতে, ট্রেডাররা স্বল্পমেয়াদী বাজারের প্রবণতা পরিবর্তনের উপর মনোযোগ দেন। এটি সাধারণত কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হয়ে থাকে। ডে ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে এই ধরনের রিভার্সাল ট্রেডিং বেশি দেখা যায়।
রিভার্সাল ট্রেডিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
রিভার্সাল ট্রেডিং করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট সরঞ্জাম এবং জ্ঞানের প্রয়োজন। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হলো:
- টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর: রিভার্সাল ট্রেডিংয়ের জন্য বিভিন্ন টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা হয়, যেমন - মুভিং এভারেজ (Moving Average), আরএসআই (Relative Strength Index), এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence), স্টোকাস্টিক অসিলেটর (Stochastic Oscillator) ইত্যাদি। এই ইন্ডিকেটরগুলো বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য রিভার্সাল পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
- চার্ট প্যাটার্ন: বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন, যেমন - হেড অ্যান্ড শোল্ডারস (Head and Shoulders), ডাবল টপ (Double Top), ডাবল বটম (Double Bottom), ট্রায়াঙ্গেল প্যাটার্ন (Triangle Pattern) ইত্যাদি রিভার্সাল ট্রেডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই প্যাটার্নগুলো বাজারের সম্ভাব্য পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেয়।
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন চিহ্নিত করা যায়, যা রিভার্সাল ট্রেডিংয়ের জন্য उपयोगी। যেমন - ডজি (Doji), হ্যামার (Hammer), হ্যাংগিং ম্যান (Hanging Man), ইনভার্টেড হ্যামার (Inverted Hammer) ইত্যাদি।
- ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম (Volume) হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা রিভার্সাল ট্রেডিংয়ের সম্ভাবনা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। যদি কোনো শেয়ারের দাম বাড়ার সময় ভলিউম কম থাকে, তবে এটি একটি দুর্বল ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নির্দেশ করে এবং রিভার্সালের সম্ভাবনা বাড়ায়।
রিভার্সাল ট্রেডিং কৌশল
রিভার্সাল ট্রেডিংয়ের জন্য কিছু জনপ্রিয় কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. পিন বার রিভার্সাল (Pin Bar Reversal): পিন বার হলো একটি ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, যা রিভার্সাল হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করে। এই প্যাটার্নে একটি লম্বা শ্যাডো (Shadow) থাকে এবং বডি (Body) ছোট হয়।
২. ইনসাইড বার রিভার্সাল (Inside Bar Reversal): ইনসাইড বার হলো এমন একটি ক্যান্ডেলস্টিক, যা আগের ক্যান্ডেলস্টিকের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত থাকে। এটি রিভার্সাল হওয়ার একটি শক্তিশালী সংকেত দেয়।
৩. ডাবল টপ/বটম রিভার্সাল (Double Top/Bottom Reversal): এই প্যাটার্নে, দাম প্রথমে একটি নির্দিষ্ট স্তরে গিয়ে বাধা পায় এবং তারপর নিচে নেমে আসে। এরপর আবার সেই একই স্তরে গিয়ে বাধা পেয়ে নিচে নেমে আসে। এটি রিভার্সাল হওয়ার একটি স্পষ্ট সংকেত।
৪. হেড অ্যান্ড শোল্ডারস রিভার্সাল (Head and Shoulders Reversal): এই প্যাটার্নটি একটি বুলিশ ট্রেন্ডের সমাপ্তি এবং বিয়ারিশ ট্রেন্ডের শুরু নির্দেশ করে। এখানে তিনটি চূড়া থাকে, যার মধ্যে মাঝের চূড়াটি সবচেয়ে উঁচু হয়।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
রিভার্সাল ট্রেডিং একটি ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল। তাই, এই পদ্ধতিতে ট্রেড করার সময় কিছু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়ম অনুসরণ করা উচিত:
- স্টপ লস (Stop Loss): স্টপ লস হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল, যা আপনার বিনিয়োগকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। স্টপ লস ব্যবহার করে আপনি একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছালে আপনার ট্রেড স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দিতে পারেন।
- রিস্ক-রিওয়ার্ড রেশিও (Risk-Reward Ratio): রিস্ক-রিওয়ার্ড রেশিও হলো আপনার ঝুঁকির পরিমাণ এবং সম্ভাব্য লাভের অনুপাত। রিভার্সাল ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, কমপক্ষে ১:২ বা ১:৩ রিস্ক-রিওয়ার্ড রেশিও বজায় রাখা উচিত।
- পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন (Portfolio Diversification): আপনার পোর্টফোলিওকে বিভিন্ন অ্যাসেটে বিনিয়োগ করুন, যাতে কোনো একটি ট্রেডে ক্ষতি হলে আপনার সামগ্রিক বিনিয়োগে বড় ধরনের প্রভাব না পড়ে।
- সঠিক ব্রোকার নির্বাচন: একটি নির্ভরযোগ্য এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্রোকার নির্বাচন করা খুবই জরুরি। ব্রোকারের প্ল্যাটফর্ম, ফি এবং গ্রাহক পরিষেবা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
উদাহরণস্বরূপ রিভার্সাল ট্রেডিং
ধরুন, একটি শেয়ারের দাম लगातार বাড়ছে এবং আপনি মনে করছেন যে এই আপট্রেন্ড (Uptrend) আর বেশি দিন টিকবে না। আপনি হেড অ্যান্ড শোল্ডারস প্যাটার্ন দেখতে পেলেন, যা একটি বিয়ারিশ রিভার্সালের সংকেত দিচ্ছে।
১. আপনি দেখলেন যে শেয়ারটির দাম ১০০ টাকায় ট্রেড করছে। ২. আপনি ৯৮ টাকায় একটি পুট অপশন (Put Option) কিনলেন, যার স্ট্রাইক প্রাইস (Strike Price) ৯৫ টাকা এবং মেয়াদ ১ সপ্তাহ। ৩. আপনি ৯৯ টাকায় স্টপ লস সেট করলেন, যাতে আপনার ঝুঁকি সীমিত থাকে।
যদি শেয়ারটির দাম কমে গিয়ে ৯৫ টাকার নিচে নেমে যায়, তবে আপনার পুট অপশনটি ইন-দ্য-মানি (In-the-Money) হবে এবং আপনি লাভবান হবেন। অন্য দিকে, যদি শেয়ারটির দাম বাড়তেই থাকে, তবে আপনার স্টপ লস সক্রিয় হবে এবং আপনি শুধুমাত্র ৯৯ টাকা ক্ষতি স্বীকার করবেন।
উপসংহার
রিভার্সাল ট্রেডিং একটি জটিল কৌশল, যা সফল হওয়ার জন্য প্রচুর অনুশীলন, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। বাজারের গতিবিধি বোঝা, টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরগুলোর সঠিক ব্যবহার এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়মগুলো অনুসরণ করে আপনি এই পদ্ধতিতে সফল হতে পারেন। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে রিভার্সাল ট্রেডিং একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে, যদি আপনি সঠিকভাবে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
আরও জানতে:
- ফরেক্স ট্রেডিং
- শেয়ার বাজার
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস
- ভলিউম প্রাইস অ্যানালাইসিস
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- মানি ম্যানেজমেন্ট
- অপশন ট্রেডিং
- ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস
- বাজারের প্রবণতা
- সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স
- ব্রেকআউট ট্রেডিং
- স্কাল্পিং
- ডে ট্রেডিং
- সুইং ট্রেডিং
- পজিশন ট্রেডিং
- ইন্ডিকেটর
- চার্ট প্যাটার্ন
- ট্রেডিং সাইকোলজি
- বাইনারি অপশন ব্রোকার
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
