ইলেকট্রোকেমিস্ট্রি

ইলেকট্রোকেমিস্ট্রি

ইলেকট্রোকেমিস্ট্রি হলো রসায়নের সেই শাখা যা রাসায়নিক বিক্রিয়া এবং বিদ্যুৎ-এর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। এটি মূলত বিজারক-জারক বিক্রিয়া (Redox reactions)-এর মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন বা ব্যবহারের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে। এই বিজ্ঞান শুধু তাত্ত্বিক আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর ব্যবহারিক প্রয়োগও ব্যাপক। ব্যাটারি, ফুয়েল সেল, বিদ্যুৎলেপন (Electroplating) এবং ক্ষয় (Corrosion) ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইলেকট্রোকেমিস্ট্রির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

ইলেকট্রোকেমিস্ট্রির মূল ধারণা

ইলেকট্রোকেমিস্ট্রির ভিত্তি হলো ইলেকট্রন স্থানান্তর। কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যখন ইলেকট্রন স্থানান্তরিত হয়, তখন তাকে বিজারক-জারক বিক্রিয়া বলা হয়। এই বিক্রিয়া দুটি অংশে বিভক্ত:

• বিজারন (Reduction): কোনো পরমাণু, আয়ন বা অণু যখন ইলেকট্রন গ্রহণ করে, তখন তাকে বিজারন বলে। এই প্রক্রিয়ায় জারন সংখ্যা হ্রাস পায়।
• জারন (Oxidation): কোনো পরমাণু, আয়ন বা অণু যখন ইলেকট্রন ত্যাগ করে, তখন তাকে জারন বলে। এই প্রক্রিয়ায় জারন সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

এই দুটি প্রক্রিয়া একই সাথে ঘটে এবং এদেরকে অর্ধ-বিক্রিয়া (Half-reactions) বলা হয়।

বিজারন ও জারনের উদাহরণ

বিজারন	জারন
Fe3+ + e- → Fe2+	Zn → Zn2+ + 2e-
Cl2 + 2e- → 2Cl-	Cu → Cu2+ + 2e-

ইলেকট্রোকেমিক্যাল সেল হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বিজারক-জারক বিক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার সময় বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় অথবা বিদ্যুৎ ব্যবহার করে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটানো হয়।

ইলেকট্রোকেমিক্যাল সেলের প্রকারভেদ

ইলেকট্রোকেমিক্যাল সেল প্রধানত দুই প্রকার:

• গ্যালভানিক সেল (Galvanic Cell) বা ভোল্টেইক সেল (Voltaic Cell): এই সেলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিজারক-জারক বিক্রিয়া ঘটে এবং এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এটি ব্যাটারির মূলনীতি। অ্যালக்ஸாண்டার ভোল্টা প্রথম এই সেল তৈরি করেন।
• ইলেকট্রোলাইটিক সেল (Electrolytic Cell): এই সেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিজারক-জারক বিক্রিয়া ঘটানো হয়। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত তাপবিদ্যুৎ (Thermal energy) ব্যবহার করা হয় রাসায়নিক পরিবর্তন আনার জন্য। বিদ্যুৎ বিশ্লেষণ (Electrolysis) এর একটি উদাহরণ।

গ্যালভানিক সেলের গঠন ও কার্যপ্রণালী

একটি সাধারণ গ্যালভানিক সেলে দুটি ইলেক্ট্রোড থাকে - একটি অ্যানোড (Anode) এবং অন্যটি ক্যাথোড (Cathode)।

• অ্যানোড: যেখানে জারন ঘটে। এটি ঋণাত্মক চার্জযুক্ত।
• ক্যাথোড: যেখানে বিজারন ঘটে। এটি ধনাত্মক চার্জযুক্ত।

এই দুটি ইলেক্ট্রোড একটি ইলেক্ট্রোলাইট দ্রবণে নিমজ্জিত থাকে এবং একটি লবণ সেতু (Salt bridge) দ্বারা সংযুক্ত থাকে। লবণ সেতু আয়ন পরিবহনে সাহায্য করে, যা কোষের মধ্যে চার্জের ভারসাম্য বজায় রাখে।

একটি সাধারণ ড্যানিয়েল সেল (Daniel cell)-এর বিক্রিয়া নিচে দেওয়া হলো:

Zn(s) → Zn²⁺(aq) + 2e^- (অ্যানোড) Cu²⁺(aq) + 2e^- → Cu(s) (ক্যাথোড)

মোট কোষ বিক্রিয়া: Zn(s) + Cu²⁺(aq) → Zn²⁺(aq) + Cu(s)

এই বিক্রিয়ায় জিঙ্ক (Zn) জারিত হয় এবং তামা (Cu) বিজারিত হয়। এই বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন ইলেকট্রন তারের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় এবং বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।

ইলেকট্রোলাইটিক সেলের গঠন ও কার্যপ্রণালী

ইলেকট্রোলাইটিক সেলে, একটি বাহ্যিক ডিসি পাওয়ার সাপ্লাই (DC power supply) ব্যবহার করে ইলেকট্রন সরবরাহ করা হয়। এই সেলে অ্যানোড ধনাত্মক এবং ক্যাথোড ঋণাত্মক চার্জযুক্ত থাকে।

একটি সাধারণ উদাহরণ হলো পানির বিদ্যুৎ বিশ্লেষণ:

2H₂O(l) → 2H₂(g) + O₂(g)

এখানে, পানি বিদ্যুৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে হাইড্রোজেন (H₂)

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ