অরাজকতা

অরাজকতা

অরাজকতা (Anarchism) একটি রাজনৈতিক দর্শন যা রাষ্ট্র এবং hierarchical power structure-এর বিলোপের পক্ষে মত দেয়। এটি বিশ্বাস করে যে মানুষ সহজাতভাবে যুক্তিবাদী এবং সহযোগিতা করতে সক্ষম, এবং কোনো প্রকার强制মূলক কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন নেই। শব্দটি গ্রিক শব্দ "anarchos" থেকে এসেছে, যার অর্থ "শাসকবিহীন"।

অরাজকতার মূল ধারণা

অরাজকতার মূল ধারণাগুলো হলো:

• রাষ্ট্রের বিলোপ: অরাজকরা মনে করেন রাষ্ট্র মানুষের স্বাধীনতা এবং স্বতঃস্ফূর্ততাকে দমন করে। তারা একটি রাষ্ট্রবিহীন সমাজ কল্পনা করেন যেখানে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী স্ব-শাসিত হবে।
• স্বেচ্ছামূলক সহযোগিতা: অরাজকরা বিশ্বাস করেন যে মানুষ একে অপরের সাথে স্বেচ্ছায় সহযোগিতা করতে সক্ষম, এবং এর জন্য কোনো বাহ্যিক বাধ্যবাধকতা বা কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন নেই।
• ব্যক্তি স্বাধীনতা: অরাজকতা ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে। প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব পছন্দ এবং মূল্যবোধ অনুসারে জীবনযাপন করার অধিকার আছে বলে তারা মনে করেন।
• সমতা: অনেক অরাজক দল সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতার পক্ষে মত দেয়। তারা মনে করেন সম্পদের সুষম বণ্টন এবং সুযোগের সমতা একটি ন্যায়পূর্ণ সমাজের জন্য অপরিহার্য।
• প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র: অরাজকরা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের পরিবর্তে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের পক্ষে। তারা মনে করেন প্রত্যেক নাগরিককে সরাসরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাওয়া উচিত।
• মিউচুয়াল এইড (Mutual Aid): এই ধারণাটি অনুযায়ী, মানুষ একে অপরের সাহায্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজের উন্নতি ঘটাতে পারে। এটি অরাজকবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি।

অরাজকতার প্রকারভেদ

অরাজকতার বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, যেগুলি তাদের তাত্ত্বিক ভিত্তি এবং রাজনৈতিক লক্ষ্যের ভিন্নতার কারণে আলাদা। এদের মধ্যে কয়েকটি প্রধান প্রকার নিচে উল্লেখ করা হলো:

• অ্যানার্কো-ক্যাপিটালিজম: এই মতবাদ অনুসারে, রাষ্ট্র বিলুপ্তির পর ব্যক্তিগত মালিকানা এবং মুক্ত বাজারের অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে। ফ্রিডরিখ হাইয়েক এবং মুRay রথবার্ড এই মতবাদের প্রধান প্রবক্তা।
• অ্যানার্কো-কম্যুনিজম: এই মতবাদ ব্যক্তিগত মালিকানার বিলোপ এবং উৎপাদনের উপকরণের সামাজিক মালিকানার পক্ষে। পিটার ক্রোপোটকিন এবং এমিলিও রামোন এই মতবাদের প্রধান প্রবক্তা।
• অ্যানার্কো-সিন্ডিক্যালিজম: এই মতবাদ শ্রমিক সংগঠন বা সিন্ডিকেটগুলোর মাধ্যমে সমাজের নিয়ন্ত্রণ এবং বিপ্লবের পক্ষে। এটি শ্রমিক শ্রেণির স্ব-ব্যবস্থাপনার উপর জোর দেয়।
• ইনস্যরেকশনারি অরাজকতা: এই মতবাদ বিপ্লবী সহিংসতার মাধ্যমে রাষ্ট্রকে উৎখাত করার পক্ষে।
• পিসফুল অ্যানার্কিজম: এই মতবাদ শান্তিপূর্ণ ও অহিংস উপায়ে অরাজক সমাজ প্রতিষ্ঠার পক্ষে।

অরাজকতার বিভিন্ন প্রকারভেদ

প্রকারভেদ	মূল বৈশিষ্ট্য	প্রধান প্রবক্তা
ব্যক্তিগত মালিকানা, মুক্ত বাজার, রাষ্ট্র বিলোপ | ফ্রিডরিখ হাইয়েক, মুRay রথবার্ড |
ব্যক্তিগত মালিকানার বিলোপ, সামাজিক মালিকানা, সমতা | পিটার ক্রোপোটকিন, এমিলিও রামোন |
শ্রমিক সংগঠন, স্ব-ব্যবস্থাপনা, বিপ্লব | রুдольফ রকের, জর্জেস সোরেল |
বিপ্লবী সহিংসতা, রাষ্ট্র উৎখাত | এনrico মাল্যাটেশ্টা |
শান্তিপূর্ণ অহিংস প্রতিরোধ, স্ব-শাসন | লিও টলস্টয় |

অরাজকতার ইতিহাস

অরাজকতার ধারণা প্রাচীন গ্রিক দর্শন এবং প্রাচীন চীনের তাওবাদ-এর মধ্যে পাওয়া যায়। তবে আধুনিক অরাজকতার সূত্রপাত উনিশ শতকে।

• উইলিয়াম গডউইন: তাঁকে অরাজকতার জনক বলা হয়। তিনি "Enquiry Concerning Political Justice" (1793) গ্রন্থে রাষ্ট্রের সমালোচনা করেন এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর জোর দেন।
• পিয়ের-জোসেফ প্রুধোঁ: তিনি প্রথম নিজেকে অরাজক হিসেবে ঘোষণা করেন। তাঁর "What is Property?" (1840) গ্রন্থে তিনি সম্পত্তির ধারণার সমালোচনা করেন।
• মাইকেল বাকুনিন: তিনি কার্ল মার্ক্স-এর সাথে রাজনৈতিক মতপার্থক্য দেখা দেন এবং অরাজকতার বিপ্লবী সম্ভাবনা তুলে ধরেন।
• পিটার ক্রোপোটকিন: তিনি "Mutual Aid: A Factor of Evolution" (1902) গ্রন্থে দেখান যে সহযোগিতা এবং মিউচুয়াল এইড প্রকৃতির একটি মৌলিক নীতি।
• নেস্তর মাখনো: স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের সময় তিনি একটি অরাজকতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।

অরাজকতার সমালোচনা

অরাজকতার কিছু সমালোচিত দিক হলো:

• অবাস্তবতা: সমালোচকদের মতে, রাষ্ট্রবিহীন সমাজ একটি অবাস্তব ধারণা। তারা মনে করেন মানুষের স্বভাব এবং সমাজের জটিলতা বিবেচনা করলে রাষ্ট্র অপরিহার্য।
• বিশৃঙ্খলা: অরাজকতার বিরোধীরা মনে করেন রাষ্ট্র বিলুপ্ত হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি হবে।
• দুর্বলতা: রাষ্ট্রবিহীন সমাজ বাইরের আক্রমণ এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে দুর্বল হতে পারে।
• স্বার্থপরতা: সমালোচকদের মতে, মানুষ সহজাতভাবে স্বার্থপর এবং অন্যের ক্ষতি করতে পারে। তাই কোনো প্রকার বাধ্যবাধকতা ছাড়া সমাজে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে অরাজকতার সম্পর্ক (রূপক)

যদিও সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তবে বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে অরাজকতার কিছু ধারণাকে রূপক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

• বিকেন্দ্রীকরণ: বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, একজন ব্যক্তি কোনো মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই সরাসরি বাজারে অংশগ্রহণ করতে পারে। এটি অরাজকতার বিকেন্দ্রীভূত ধারণার সাথে মেলে।
• স্ব-নিয়ন্ত্রণ: একজন ট্রেডারকে নিজের ঝুঁকি এবং পুরস্কার সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে সচেতন থাকতে হয় এবং নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ট্রেড করতে হয়। এটি ব্যক্তি স্ব-শাসনের ধারণার সাথে সম্পর্কিত।
• ঝুঁকি গ্রহণ: বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ উচ্চ ঝুঁকি থাকে, এবং একজন ট্রেডারকে নিজের ঝুঁকির জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী থাকতে হয়। এটি অরাজকতার ব্যক্তি স্বাধীনতার ধারণার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
• বাজারের অস্থিতিশীলতা: বাজারের অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনগুলো অরাজকতার ধারণার সাথে সম্পর্কিত, যেখানে কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ নেই।

তবে, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে এই সম্পর্কগুলো সম্পূর্ণরূপে রূপক এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে অরাজকতার কোনো প্রত্যক্ষ যোগসূত্র নেই।

আধুনিক বিশ্বে অরাজকতা

আধুনিক বিশ্বে অরাজকতা বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রভাব ফেলেছে। অকুপাই মুভমেন্ট, গ্লোবাল জাস্টিস মুভমেন্ট এবং এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকটিভিজম-এর মতো আন্দোলনে অরাজকতার ধারণাগুলো দেখা যায়। এছাড়াও, বিভিন্ন স্ব-শাসিত অঞ্চল এবং কম্যুনে অরাজকতার নীতিগুলো অনুসরণ করা হয়।

আরও জানতে

• রাজনৈতিক দর্শন
• রাষ্ট্র
• ব্যক্তি স্বাধীনতা
• সাম্যবাদ
• পুঁজিবাদ
• উদারতাবাদ
• বিপ্লব
• গণতন্ত্র
• মিউচুয়াল এইড
• ফ্রিডরিখ হাইয়েক
• মুRay রথবার্ড
• পিটার ক্রোপোটকিন
• মাইকেল বাকুনিন
• উইলিয়াম গডউইন
• পিয়ের-জোসেফ প্রুধোঁ
• নেস্তর মাখনো
• টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
• ভলিউম বিশ্লেষণ
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
• ট্রেডিং কৌশল

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ