ARPANET

ARPANET: একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ভূমিকা

ARPANET (Advanced Research Projects Agency Network) হল প্যাকেট স্যুইচিং নেটওয়ার্কের প্রথম সংস্করণ, যা পরবর্তীতে ইন্টারনেট-এর ভিত্তি স্থাপন করে। ১৯৬৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের অধীনে ARPA (Advanced Research Projects Agency) এটি তৈরি করে। এই নেটওয়ার্কটি মূলত গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন এবং কম্পিউটিং রিসোর্স শেয়ার করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। ARPANET-এর উদ্ভাবন কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি-র ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা।

ARPANET-এর প্রেক্ষাপট

১৯৬০-এর দশকে, কম্পিউটার প্রযুক্তি দ্রুত বিকশিত হচ্ছিল, কিন্তু বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদান করা ছিল অত্যন্ত কঠিন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কম্পিউটার সিস্টেম ছিল এবং সেগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা প্রায় অসম্ভব ছিল। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ARPA একটি নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা বিভিন্ন কম্পিউটারকে একে অপরের সাথে যুক্ত করতে পারবে।

ঠান্ডা যুদ্ধের (Cold War) সময়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বিকেন্দ্রীভূত যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে চেয়েছিল, যা কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে আক্রমণের শিকার হলেও সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে যাবে না। ARPANET এই উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক ছিল, কারণ এর নেটওয়ার্ক কাঠামো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল যাতে কোনো একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাকি অংশ সচল থাকে।

ARPANET-এর নকশা ও প্রযুক্তি

ARPANET-এর নকশা মূলত প্যাকেট স্যুইচিং প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। এই প্রযুক্তিতে, ডেটা ছোট ছোট প্যাকেটে বিভক্ত করে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাঠানো হয় এবং গন্তব্যে পৌঁছানোর পর সেগুলো পুনরায় একত্রিত করা হয়। প্যাকেট স্যুইচিংয়ের ধারণাটি পাওল বারান এবং ডোনাল্ড ডেভিস প্রস্তাব করেন।

ARPANET-এর প্রাথমিক কাঠামোতে চারটি প্রধান নোড ছিল:

• University of California, Los Angeles (UCLA)
• Stanford Research Institute (SRI)
• University of California, Santa Barbara (UCSB)
• University of Utah

এই নোডগুলো IMP (Interface Message Processor) নামক বিশেষ কম্পিউটারের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যুক্ত ছিল। IMP গুলো ডেটা প্যাকেটগুলো গ্রহণ করত, সেগুলোকে সঠিক গন্তব্যের দিকে পাঠাত এবং নেটওয়ার্কের যানজট নিয়ন্ত্রণ করত।

ARPANET-এর প্রোটোকল

ARPANET-এর শুরুতে NCP (Network Control Program) নামক একটি প্রোটোকল ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু NCP-এর কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, যার কারণে ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে TCP/IP (Transmission Control Protocol/Internet Protocol) প্রোটোকল তৈরি করা হয়। TCP/IP প্রোটোকল ARPANET-কে আরও নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকরী করে তোলে এবং এটি পরবর্তীতে ইন্টারনেটের স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকল হিসেবে গৃহীত হয়। TCP/IP মডেল আধুনিক ইন্টারনেটের ভিত্তি।

ARPANET-এর বিবর্তন

১৯৭০-এর দশকে, ARPANET ধীরে ধীরে প্রসারিত হতে থাকে এবং আরও বেশি সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এর সাথে যুক্ত হয়। ইমেইল (Email) এবং ফাইল ট্রান্সফার (File Transfer) এর মতো নতুন অ্যাপ্লিকেশনগুলো ARPANET-এর মাধ্যমে জনপ্রিয়তা লাভ করে। র‍্যা সিলভার, রোনাল্ড ক্রেমার এবং অন্যান্য প্রোগ্রামারদের তৈরি করা ইমেইল সিস্টেম নেটওয়ার্কের ব্যবহারকারীদের মধ্যে দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

১৯৮০-এর দশকে, ARPANET দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়: ARPANET এবং MILNET (Military Network)। MILNET সামরিক ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে ARPANET মূলত গবেষণা এবং শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে থাকে।

১৯৯0 সালের মধ্যে, ARPANET তার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, কিন্তু এর প্রযুক্তি এবং ধারণাগুলো ইন্টারনেটের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ARPANET-এর প্রভাব

ARPANET-এর উদ্ভাবন কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এবং যোগাযোগ প্রযুক্তিতে একটি বিপ্লব নিয়ে আসে। এটি ইন্টারনেটের পথ খুলে দেয়, যা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। ARPANET-এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব নিচে উল্লেখ করা হলো:

• প্যাকেট স্যুইচিং প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহার।
• TCP/IP প্রোটোকলের সৃষ্টি, যা ইন্টারনেটের ভিত্তি স্থাপন করে।
• ইমেইল এবং ফাইল ট্রান্সফারের মতো নতুন অ্যাপ্লিকেশনের উদ্ভাবন।
• বিশ্বজুড়ে গবেষণা এবং শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি।
• বাণিজ্য, শিক্ষা, এবং বিনোদনের ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ সৃষ্টি।

ARPANET এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মধ্যে সম্পর্ক

সরাসরি ARPANET এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। তবে, ARPANET-এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের উন্নয়ন হয়েছে এবং এই ইন্টারনেটই এখন বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। আধুনিক বাইনারি অপশন ট্রেডিং সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের উপর নির্ভরশীল, যা ARPANET-এর উদ্ভাবনের ফলেই সম্ভব হয়েছে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে আলোচনা করা হলো:

• বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি বিনিয়োগ পদ্ধতি যেখানে বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের (যেমন: স্টক, মুদ্রা, কমোডিটি) দাম বাড়বে নাকি কমবে তা অনুমান করে।
• এই ট্রেডিংয়ে বিনিয়োগকারীকে দুটি বিকল্পের মধ্যে একটি বেছে নিতে হয়: কল (Call) অথবা পুট (Put)।
• যদি বিনিয়োগকারীর অনুমান সঠিক হয়, তবে তিনি লাভ পান, অন্যথায় তিনি বিনিয়োগ করা অর্থ হারান।
• বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে, যেমন: ৬০ সেকেন্ড, ৫ মিনিট, বা ১ ঘণ্টা।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল (Strategies) আলোচনা করা হলো:

1. স্ট্র্যাডল (Straddle): এই কৌশলটি ব্যবহার করা হয় যখন বাজারের অস্থিরতা বেশি থাকে। 2. স্ট্র্যাংগল (Strangle): এটি স্ট্র্যাডলের মতো, কিন্তু এখানে কল এবং পুট অপশনের স্ট্রাইক প্রাইস ভিন্ন থাকে। 3. মার্টিংগেল (Martingale): এই কৌশলটি ঝুঁকিপূর্ণ, তবে কিছু ক্ষেত্রে লাভজনক হতে পারে। 4. পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্ট (Point and Figure Chart): এটি একটি টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস টুল।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূচক (Indicators) হলো:

• মুভিং এভারেজ (Moving Average)
• আরএসআই (Relative Strength Index)
• এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence)
• বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands)

এই কৌশল এবং সূচকগুলো ব্যবহার করে বাইনারি অপশন ট্রেডাররা তাদের ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

উপসংহার

ARPANET ছিল কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এবং ইন্টারনেটের বিকাশে একটি মাইলফলক। এর উদ্ভাবন আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছে এবং বিশ্বকে আরও কাছাকাছি এনেছে। যদিও ARPANET এখন আর নেই, তবে এর উত্তরাধিকার ইন্টারনেটের মাধ্যমে আজও বিদ্যমান। ইন্টারনেট গভর্নেন্স এবং নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ARPANET-এর গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক

বছর	ঘটনা
১৯৬৯	ARPANET-এর প্রথম নোড স্থাপন করা হয় (UCLA, SRI, UCSB, University of Utah)
১৯৭১	ইমেইল (Email) এর উদ্ভাবন
১৯৭২	ARPANET প্রথম জনসমক্ষে প্রদর্শিত হয়
১৯৮৩	TCP/IP প্রোটোকল স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে গৃহীত হয়
১৯৯০	ARPANET কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়

আরও দেখুন

• ইন্টারনেট
• কম্পিউটার নেটওয়ার্ক
• প্যাকেট স্যুইচিং
• TCP/IP
• ইমেইল
• World Wide Web
• ডোনাল্ড ডেভিস
• র‍্যা সিলভার
• বাইনারি অপশন ট্রেডিং
• টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন জমা $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন জমা $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগদান করুন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন @strategybin এই সুবিধাগুলি পেতে: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশল বিশ্লেষণ ✓ বাজারের ট্রেন্ড সতর্কবার্তা ✓ নবাগতদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ