ওয়াশিংটন কনসেন্সাস

ওয়াশিংটন কনসেন্সাস

ভূমিকা ওয়াশিংটন কনসেন্সাস বিংশ শতাব্দীর শেষভাগের একটি প্রভাবশালী অর্থনৈতিক মতবাদ। এটি মূলত ১৯৯০-এর দশকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) (IMF), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে লাতিন আমেরিকা, পূর্ব ইউরোপ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এই মতবাদ 'ওয়াশিংটন কনসেন্সাস' নামে পরিচিত হওয়ার কারণ হলো এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সদর দপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত।

উৎপত্তি ও প্রেক্ষাপট ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর অনেক উন্নয়নশীল দেশ অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো বাজার অর্থনীতির দিকে ঝুঁকতে শুরু করে, অন্যদিকে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো দীর্ঘস্থায়ী ঋণের বোঝা এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছিল। এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ এবং অর্থনৈতিক সহায়তার শর্ত হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণের ওপর জোর দেয়। জন উইলিয়ামসন ১৯৯০ সালে একটি প্রবন্ধে এই নীতিগুলোর সমষ্টিকে ‘ওয়াশিংটন কনসেন্সাস’ হিসেবে অভিহিত করেন।

ওয়াশিংটন কনসেন্সাসের মূল উপাদান ওয়াশিংটন কনসেন্সাসের অধীনে সাধারণত নিম্নলিখিত ১০টি নীতি অন্তর্ভুক্ত ছিল:

১. রাজকোষীয় শৃঙ্খলা (Fiscal Discipline) : সরকারের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং বাজেট ঘাটতি হ্রাস করা। এর মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব। ২. ব্যয় অগ্রাধিকারের পুনর্বিন্যাস (Reordering of Public Expenditure Priorities) : শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামোর মতো উৎপাদনশীল খাতে সরকারি ব্যয়ের অগ্রাধিকার দেওয়া এবং অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় কমানো। ৩. কর সংস্কার (Tax Reform) : একটি বিস্তৃত এবং সহজ কর ব্যবস্থা তৈরি করা, যা কর ফাঁকি কমাতে এবং রাজস্ব আয় বাড়াতে সহায়ক। ৪. আর্থিক উদারীকরণ (Financial Liberalization) : সুদের হার নির্ধারণে বাজারের ভূমিকা বৃদ্ধি করা এবং আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করা। এর ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হওয়ার কথা। ৫. বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার উদারীকরণ (Exchange Rate Liberalization) : বাজারের চাহিদা ও জোগানের ওপর ভিত্তি করে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করা। ৬. বাণিজ্য উদারীকরণ (Trade Liberalization) : আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বাধা দূর করা এবং মুক্ত বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করা। ৭. সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের উদারীকরণ (Liberalization of Inward Foreign Direct Investment) : বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা দূর করা এবং বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করা। ৮. রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের বেসরকারিকরণ (Privatization) : রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পগুলোর মালিকানা বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা, যাতে দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়। ৯. বাজারের উদারীকরণ ও Deregulation : বিভিন্ন খাতের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করা এবং বাজারের অবাধ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা। ১০. আইন ও সম্পত্তির অধিকারের সুরক্ষা (Secure Property Rights) : সম্পত্তির অধিকার রক্ষা করা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সহায়ক।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্ক যদিও ওয়াশিংটন কনসেন্সাস সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্কিত নয়, তবে এর নীতিগুলো বিশ্ব অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার – এই বিষয়গুলো বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো দেশে ওয়াশিংটন কনসেন্সাসের নীতিগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে, যা স্থানীয় মুদ্রার মানকে শক্তিশালী করতে পারে। এর ফলে সেই দেশের অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া বাইনারি অপশনগুলোতে ট্রেড করার সুযোগ তৈরি হতে পারে।

সমালোচনা ওয়াশিংটন কনসেন্সাসের অনেক কঠোর সমালোচক রয়েছে। তাদের মতে, এই নীতিগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উপযুক্ত ছিল না এবং এর ফলে সামাজিক বৈষম্য, দারিদ্র্য এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু প্রধান সমালোচনা নিচে উল্লেখ করা হলো:

• একই আকারের জন্য সব উপযুক্ত নয় (One-size-fits-all approach) : সমালোচকদের মতে, ওয়াশিংটন কনসেন্সাসের নীতিগুলো সব দেশের জন্য একই রকম ছিল, যা প্রতিটি দেশের নিজস্ব অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করেনি।
• সামাজিক প্রভাব (Social Impact) : বেসরকারিকরণ এবং ব্যয় সংকোচনের কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারি ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় দরিদ্র ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
• গণতন্ত্রের অভাব (Lack of Democracy) : এই নীতিগুলো প্রায়শই উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হতো, যেখানে স্থানীয় জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করা হতো।
• আর্থিক সংকট (Financial Crises) : কিছু ক্ষেত্রে, আর্থিক উদারীকরণের ফলে আর্থিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যেমন ১৯৯৭ সালের এশিয়ান আর্থিক সংকট।
• বৈষম্য বৃদ্ধি (Increased Inequality) : বাণিজ্য উদারীকরণের ফলে স্থানীয় শিল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিকল্প প্রস্তাবনা ওয়াশিংটন কনসেন্সাসের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন অর্থনৈতিক মতবাদ প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

• পোস্ট-ওয়াশিংটন কনসেন্সাস (Post-Washington Consensus) : এই মতবাদ ওয়াশিংটন কনসেন্সাসের কিছু ত্রুটি স্বীকার করে এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, সুশাসন, সামাজিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়।
• নতুন কাঠামোগত অর্থনীতি (New Structural Economics) : এই মতবাদ বাজারের ব্যর্থতাগুলো দূর করতে সরকারের সক্রিয় ভূমিকা এবং কাঠামোগত পরিবর্তনের ওপর জোর দেয়।
• উন্নয়নশীল রাষ্ট্র (Developmental State) : এই মতবাদ শিল্পোন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেয়।

বিভিন্ন দেশে ওয়াশিংটন কনসেন্সাসের প্রভাব বিভিন্ন দেশে ওয়াশিংটন কনসেন্সাসের প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন ছিল।

• লাতিন আমেরিকা : অনেক লাতিন আমেরিকান দেশে, ওয়াশিংটন কনসেন্সাসের নীতিগুলো মুদ্রাস্ফীতি কমাতে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে সহায়ক হয়েছিল, কিন্তু একই সাথে সামাজিক বৈষম্য এবং দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়েছিল।
• পূর্ব ইউরোপ : পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে, ওয়াশিংটন কনসেন্সাসের নীতিগুলো বাজার অর্থনীতিতে রূপান্তর এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সহায়ক হয়েছিল, কিন্তু কিছু দেশে এটি ব্যাপক বেকারত্ব এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল।
• এশিয়া : এশিয়ার কিছু দেশে, যেমন দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ান, ওয়াশিংটন কনসেন্সাসের নীতিগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছিল, কারণ তারা রপ্তানি-ভিত্তিক শিল্পোন্নয়ন এবং বিনিয়োগের ওপর বেশি জোর দিয়েছিল।

বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রাসঙ্গিকতা বর্তমানে, ওয়াশিংটন কনসেন্সাসের প্রভাব কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, তবে এর কিছু নীতি এখনো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চাপিয়ে দেওয়া হয়। তবে, এখন উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে নীতি নির্ধারণে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ ওয়াশিংটন কনসেন্সাস-এর অর্থনৈতিক প্রভাবগুলি টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে বোঝা যায়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের ফলে স্টক মার্কেটে পরিবর্তন দেখা গেলে, তা টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। এছাড়াও, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে ভলিউম বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব বোঝা যায়।

• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
• মুভিং এভারেজ
• আরএসআই (Relative Strength Index)
• এমএসিডি (MACD)
• ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট
• বোলিঙ্গার ব্যান্ড
• ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP)
• অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV)
• অ্যাকুমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন
• চায়কিন মানি ফ্লো

কৌশল এবং ট্রেডিংয়ের টিপস ওয়াশিংটন কনসেন্সাস-এর নীতিগুলির পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সুযোগগুলি ট্রেডিং কৌশলয়ের মাধ্যমে কাজে লাগানো যেতে পারে।

• স্কাল্পিং
• ডে ট্রেডিং
• সুইং ট্রেডিং
• পজিশন ট্রেডিং
• ট্রেন্ড ফলোয়িং
• রেঞ্জ ট্রেডিং
• ব্রেকআউট ট্রেডিং
• রিভার্সাল ট্রেডিং
• সংবাদ ভিত্তিক ট্রেডিং
• ম্যাক্রো ইকোনমিক ট্রেডিং
• আর্বিট্রেজ
• হেজিং
• কোরিলেশন ট্রেডিং
• প্যাটার্ন ট্রেডিং
• মেন্টাল মডেল

উপসংহার ওয়াশিংটন কনসেন্সাস একটি জটিল এবং বিতর্কিত অর্থনৈতিক মতবাদ। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু এর ফলস্বরূপ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। বর্তমানে, উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ