Protectionism

Protectionism

প্রোটেকশনিজম (Protectionism) হল এমন একটি অর্থনৈতিক নীতি যেখানে কোনো দেশ তার জাতীয় অর্থনীতিকে বিদেশি প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই নীতি সাধারণত আমদানি শুল্ক (Import tariffs), কোটা (Quotas) এবং অন্যান্য বাণিজ্য বাধা (Trade barriers) আরোপের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। প্রোটেকশনিজম বিভিন্ন কারণে গ্রহণ করা হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে কর্মসংস্থান রক্ষা, শিল্পায়ন (Industrialization) ত্বরান্বিত করা, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং উদীয়মান শিল্পগুলোকে সহায়তা করা।

প্রোটেকশনিজমের প্রকারভেদ

প্রোটেকশনিজম বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পেতে পারে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকার আলোচনা করা হলো:

• শুল্ক (Tariffs): এটি সবচেয়ে সাধারণ প্রোটেকশনিস্টিক পদক্ষেপ। শুল্ক হলো আমদানিকৃত পণ্যের উপর ধার্য করা কর। এর ফলে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়, যা স্থানীয় উৎপাদকদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা তৈরি করে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-এ শুল্কের প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে।
• কোটা (Quotas): কোটা হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণের উপর সীমাবদ্ধতা। এটি সরাসরি আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে।
• নন-টারীফ বাধা (Non-Tariff Barriers): এই ধরনের বাধাগুলো শুল্ক বা কোটার মতো সরাসরি নয়, তবে এগুলো আমদানিকে কঠিন করে তোলে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি (Sanitary) এবং নিরাপত্তা মান (Safety standards), আমদানির লাইসেন্সিং, এবং প্রশাসনিক বিলম্ব।
• সাবসিডি (Subsidies): সরকার যখন স্থানীয় উৎপাদকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, তখন তাকে সাবসিডি বলা হয়। এটি তাদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে। কৃষি অর্থনীতি-তে এর প্রভাব অনেক বেশি দেখা যায়।
• বৈদেশিক মুদ্রার নিয়ন্ত্রণ (Exchange Control): কোনো দেশের সরকার তার মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করে আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে পারে।

প্রোটেকশনিজমের কারণ

বিভিন্ন কারণে কোনো দেশ প্রোটেকশনিস্টিক নীতি গ্রহণ করতে পারে। কয়েকটি প্রধান কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

• কর্মসংস্থান রক্ষা (Protecting Jobs): প্রোটেকশনিজম স্থানীয় শিল্পগুলোকে বিদেশি প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা করে, যা কর্মসংস্থান বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।
• শিল্পের বিকাশ (Infant Industry Argument): নতুন এবং উদীয়মান শিল্পগুলোকে বিদেশি প্রতিযোগিতার সঙ্গে লড়াই করতে অসুবিধা হতে পারে। প্রোটেকশনিজম তাদের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।
• জাতীয় নিরাপত্তা (National Security): কিছু পণ্য, যেমন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, খাদ্য এবং জ্বালানি, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক। এই পণ্যগুলোর স্থানীয় উৎপাদন নিশ্চিত করতে প্রোটেকশনিজম ব্যবহার করা হয়।
• রাজনৈতিক কারণ (Political Reasons): রাজনৈতিক চাপ এবং জনমতের কারণে সরকার প্রোটেকশনিস্টিক নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হতে পারে।
• অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা (Economic Stability): বাণিজ্য ঘাটতি (Trade deficit) কমাতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (Economic growth) স্থিতিশীল রাখতে প্রোটেকশনিজম সহায়ক হতে পারে।

প্রোটেকশনিজমের সুবিধা

প্রোটেকশনিজমের কিছু সম্ভাব্য সুবিধা রয়েছে:

• স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা (Protection of Domestic Industries): প্রোটেকশনিজম স্থানীয় শিল্পগুলোকে বিদেশি প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা করে এবং তাদের বিকাশে সহায়তা করে।
• কর্মসংস্থান বৃদ্ধি (Increased Employment): স্থানীয় শিল্পগুলো প্রসারিত হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
• সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি (Increased Government Revenue): শুল্ক আরোপের মাধ্যমে সরকার রাজস্ব আয় করতে পারে।
• বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় (Conservation of Foreign Exchange): আমদানি কম হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষিত থাকে।
• জাতীয় স্বয়ংসম্পূর্ণতা (National Self-Sufficiency): প্রোটেকশনিজম একটি দেশকে কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সাহায্য করতে পারে।

প্রোটেকশনিজমের অসুবিধা

প্রোটেকশনিজমের কিছু উল্লেখযোগ্য অসুবিধা রয়েছে:

• পণ্যের দাম বৃদ্ধি (Higher Prices for Consumers): শুল্ক এবং কোটার কারণে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়, যা ভোক্তাদের জন্য ক্ষতিকর।
• বাণিজ্য যুদ্ধ (Trade Wars): একটি দেশ যদি প্রোটেকশনিস্টিক নীতি গ্রহণ করে, তবে অন্য দেশগুলোও এর প্রতিক্রিয়ায় একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, যা বাণিজ্য যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organization - WTO) এই ধরনের পরিস্থিতি নিরসনে কাজ করে।
• উদ্ভাবনের অভাব (Lack of Innovation): বিদেশি প্রতিযোগিতার অভাবে স্থানীয় উৎপাদকরা নতুনত্ব আনতে উৎসাহিত হয় না।
• অর্থনৈতিক অদক্ষতা (Economic Inefficiency): প্রোটেকশনিজম সম্পদ বিতরণে অদক্ষতা সৃষ্টি করতে পারে।
• আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবনতি (Deterioration of International Relations): প্রোটেকশনিস্টিক নীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রোটেকশনিজমের বিকল্প

প্রোটেকশনিজমের বিকল্প হিসেবে আরও কিছু নীতি বিদ্যমান, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে:

• মুক্ত বাণিজ্য (Free Trade): বাণিজ্য বাধা হ্রাস করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধি করা।
• তুলনামূলক সুবিধা (Comparative Advantage): যে পণ্য উৎপাদনে একটি দেশের দক্ষতা বেশি, সেই পণ্য উৎপাদনে মনোযোগ দেওয়া।
• বিনিয়োগ (Investment): স্থানীয় শিল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
• শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (Education and Training): শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
• প্রযুক্তিগত উন্নয়ন (Technological Development): নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রোটেকশনিজম

বর্তমানে, বিশ্বে প্রোটেকশনিস্টিক প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ (US-China trade war) এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ভূ-রাজনৈতিক (Geopolitical) উত্তেজনা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে অনেক দেশই তাদের স্থানীয় শিল্পগুলোকে রক্ষার জন্য প্রোটেকশনিস্টিক নীতি গ্রহণ করছে। এর ফলে গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন (Global supply chain) -এ disruption দেখা যাচ্ছে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা আসার সম্ভাবনা বাড়ছে।

প্রোটেকশনিজম এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং

প্রোটেকশনিজম অর্থনৈতিক নীতিগুলো বৈদেশিক মুদ্রাবাজার (Foreign exchange market) এবং স্টক মার্কেট (Stock market) -এর উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। প্রোটেকশনিস্টিক পদক্ষেপের কারণে কোনো দেশের মুদ্রার মান কমতে পারে, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো দেশ শুল্ক আরোপ করে, তবে সেই দেশের মুদ্রার মান কমতে পারে, এবং একজন বাইনারি অপশন ট্রেডার সেই মুদ্রার উপর "Put" অপশন কিনে লাভবান হতে পারে।

এছাড়াও, প্রোটেকশনিজম নির্দিষ্ট শিল্পখাতগুলোর উপর প্রভাব ফেলে। কোনো শিল্পখাত প্রোটেকশনিস্টিক নীতির কারণে উপকৃত হলে সেই খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়তে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডাররা এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে "Call" অপশন কিনতে পারেন।

তবে, প্রোটেকশনিস্টিক নীতির প্রভাব বিশ্লেষণ করার জন্য টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস (Technical analysis), ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস (Fundamental analysis) এবং ভলিউম অ্যানালাইসিস (Volume analysis) -এর মতো কৌশলগুলো ব্যবহার করা উচিত।

• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick patterns)
• মুভিং এভারেজ (Moving averages)
• আরএসআই (RSI - Relative Strength Index)
• এমএসিডি (MACD - Moving Average Convergence Divergence)
• ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci retracement)
• বোলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands)
• অপশন চেইন (Option chain)
• ইম্প্লাইড ভোলাটিলিটি (Implied volatility)
• গ্রিকস (Greeks) - ডেল্টা, গামা, থিটা, ভেগা
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk management)
• পজিশন সাইজিং (Position sizing)
• ডাইভারসিফিকেশন (Diversification)
• ট্রেডিং সাইকোলজি (Trading psychology)
• মার্কেটের সেন্টিমেন্ট (Market sentiment)
• নিউজ ট্রেডিং (News trading)

এগুলো বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

উপসংহার

প্রোটেকশনিজম একটি জটিল অর্থনৈতিক নীতি, যার সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই রয়েছে। এটি স্থানীয় শিল্পকে রক্ষা করতে এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়ক হতে পারে, তবে একই সাথে পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে। বর্তমান বিশ্বে প্রোটেকশনিস্টিক প্রবণতা বৃদ্ধির কারণে, এই নীতির প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সঠিক কৌশল অবলম্বন করা জরুরি। বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য, প্রোটেকশনিস্টিক নীতিগুলোর অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করে ট্রেডিংয়ের সুযোগ খুঁজে বের করা সম্ভব।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ