Volume Price Trend (VPT)

ভলিউম প্রাইস ট্রেন্ড (VPT): বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের একটি কার্যকরী নির্দেশক

ভলিউম প্রাইস ট্রেন্ড (VPT) একটি টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস টুল যা মূল্য এবং ভলিউম ডেটার সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। এটি মূলত বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য ট্রেন্ড পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিতে ব্যবহৃত হয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, VPT একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডিকেটর হিসেবে কাজ করে, যা ট্রেডারদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। এই নিবন্ধে, VPT-এর মূল ধারণা, গণনা পদ্ধতি, ব্যবহার এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে এর প্রয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

VPT-এর ধারণা

VPT নির্দেশকটি বাজারের অন্তর্নিহিত শক্তি পরিমাপ করে। এটি শুধুমাত্র মূল্যের পরিবর্তন নয়, বরং সেই পরিবর্তনের সাথে ভলিউমের সম্পর্ককেও বিবেচনা করে। VPT-এর মূল ধারণা হলো, যদি কোনো শেয়ারের দাম বাড়ে এবং একই সাথে ভলিউমও বৃদ্ধি পায়, তবে এটি একটি শক্তিশালী বুলিশ সংকেত। অন্যদিকে, দাম কমলে এবং ভলিউম বাড়লে, সেটি বিয়ারিশ প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।

VPT কিভাবে গণনা করা হয়?

VPT গণনা করার সূত্রটি বেশ সহজ:

VPT = PV * Vol

এখানে,

PV = (Close – Previous Close) / Previous Close Vol = ভলিউম

অর্থাৎ, বর্তমান ক্লোজিং প্রাইস এবং আগের ক্লোজিং প্রাইসের শতকরা পরিবর্তনকে ভলিউম দিয়ে গুণ করা হয়। এই মানগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য যোগ করে VPT পাওয়া যায়।

উদাহরণস্বরূপ:

যদি কোনো শেয়ারের আগের ক্লোজিং প্রাইস হয় ১০০ টাকা এবং বর্তমান ক্লোজিং প্রাইস হয় ১০২ টাকা, তাহলে PV হবে (১০২-১০০)/১০০ = ০.০২ বা ২%। যদি ঐ দিনের ভলিউম হয় ১,০০,০০০ শেয়ার, তাহলে VPT হবে ০.০২ * ১,০০,০০০ = ২,০০০।

VPT-এর ব্যবহার

VPT ইন্ডিকেটরটি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:

• ট্রেন্ড শনাক্তকরণ: VPT একটি নির্দিষ্ট দিকে ঊর্ধ্বমুখী হলে, সেটি বুলিশ ট্রেন্ডের ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে, নিম্নমুখী হলে বিয়ারিশ ট্রেন্ডের পূর্বাভাস দেয়।
• ডাইভারজেন্স চিহ্নিত করা: যখন দাম একটি নতুন উচ্চতা তৈরি করে, কিন্তু VPT তা অনুসরণ করে না, তখন এটিকে বিয়ারিশ ডাইভারজেন্স বলা হয়। এর অর্থ হলো বুলিশ ট্রেন্ড দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এবং দাম কমতে পারে। একইভাবে, দাম নতুন নিম্নতা তৈরি করলেও VPT যদি ঊর্ধ্বমুখী হয়, তবে বুলিশ ডাইভারজেন্স দেখা যায়, যা ট্রেন্ড পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেয়।
• ওভারবট ও ওভারসোল্ড অবস্থা নির্ণয়: VPT-এর মান খুব বেশি হলে, বাজার ওভারবট (Overbought) অবস্থায় আছে বলে মনে করা হয়, এবং দাম সংশোধন হতে পারে। Vice versa, VPT-এর মান খুব কম হলে, বাজার ওভারসোল্ড (Oversold) অবস্থায় আছে বলে ধরা হয়, এবং দাম বাড়তে পারে।
• সম্ভাব্য রিভার্সাল পয়েন্ট চিহ্নিত করা: VPT শূন্য রেখা অতিক্রম করলে, এটি সম্ভাব্য ট্রেন্ড রিভার্সালের ইঙ্গিত দিতে পারে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে VPT-এর প্রয়োগ

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, VPT ইন্ডিকেটরটি নিম্নলিখিতভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে:

• কল অপশন (Call Option): যদি VPT ঊর্ধ্বমুখী হয় এবং ওভারবট অবস্থায় না থাকে, তবে কল অপশন কেনা যেতে পারে। এর মানে হলো, দাম বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
• পুট অপশন (Put Option): যদি VPT নিম্নমুখী হয় এবং ওভারসোল্ড অবস্থায় না থাকে, তবে পুট অপশন কেনা যেতে পারে। এর মানে হলো, দাম কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
• ডাইভারজেন্স ট্রেডিং: যখন দাম এবং VPT-এর মধ্যে ডাইভারজেন্স দেখা যায়, তখন বিপরীত দিকে ট্রেড করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি দাম বাড়ে কিন্তু VPT কমে, তবে পুট অপশন কেনা যেতে পারে।
• VPT এবং অন্যান্য ইন্ডিকেটরের সমন্বয়: শুধুমাত্র VPT-এর উপর নির্ভর না করে, অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর যেমন মুভিং এভারেজ, আরএসআই (Relative Strength Index), এবং MACD (Moving Average Convergence Divergence) এর সাথে মিলিয়ে ট্রেড করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

VPT ব্যবহারের কিছু কৌশল

• VPT ক্রসওভার: যখন VPT শূন্য রেখা অতিক্রম করে, তখন এটি একটি ট্রেডিং সংকেত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যদি VPT শূন্য রেখা থেকে উপরে যায়, তবে এটি বুলিশ সংকেত, এবং নিচে গেলে বিয়ারিশ সংকেত।
• VPT ডাইভারজেন্স কনফার্মেশন: ডাইভারজেন্স চিহ্নিত করার পরে, অন্যান্য ইন্ডিকেটর দিয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, যদি দাম বাড়ার সময় VPT কমে যায় এবং একই সাথে RSI-ও নিম্নমুখী হয়, তবে এটি বিয়ারিশ ডাইভারজেন্সের একটি শক্তিশালী সংকেত।
• ভলিউম স্পাইক বিশ্লেষণ: VPT-এর সাথে ভলিউমের আকস্মিক বৃদ্ধি বা হ্রাস বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদি দাম সামান্য বাড়ার সাথে সাথে ভলিউম অনেক বেড়ে যায়, তবে এটি শক্তিশালী বুলিশ সংকেত হতে পারে।

VPT-এর সীমাবদ্ধতা

VPT একটি শক্তিশালী ইন্ডিকেটর হওয়া সত্ত্বেও, এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:

• ফলস সিগন্যাল: অনেক সময় VPT ভুল সংকেত দিতে পারে, বিশেষ করে সাইডওয়েজ মার্কেটে।
• ল্যাগিং ইন্ডিকেটর: VPT একটি ল্যাগিং ইন্ডিকেটর, অর্থাৎ এটি মূল্যের পরিবর্তনের পরে সংকেত দেয়।
• ভলিউম ম্যানিপুলেশন: ভলিউম ডেটা ম্যানিপুলেট করা হলে, VPT-এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।

অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়

• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন : VPT-এর সংকেতগুলো ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নের সাথে মিলিয়ে দেখলে ট্রেডিংয়ের নির্ভুলতা বাড়ে।
• ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট : ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলোর সাথে VPT-এর সমন্বয়ে ট্রেড করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
• সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল : সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলের কাছাকাছি VPT-এর সংকেতগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা : বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি। তাই, স্টপ-লস এবং টেক-প্রফিট অর্ডার ব্যবহার করে ঝুঁকি সীমিত করা উচিত।
• মানি ম্যানেজমেন্ট : সঠিক মানি ম্যানেজমেন্ট কৌশল অবলম্বন করে ট্রেডিংয়ের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
• বাজার বিশ্লেষণ : ট্রেড করার আগে বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা জরুরি।
• ট্রেডিং সাইকোলজি : ট্রেডিংয়ের সময় মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
• অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার : অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টগুলোর দিকে নজর রাখা উচিত, কারণ এগুলোর কারণে বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।
• ডেমো অ্যাকাউন্ট : রিয়েল ট্রেডিং শুরু করার আগে ডেমো অ্যাকাউন্টে অনুশীলন করা উচিত।
• ব্রোকার নির্বাচন : একটি নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত ব্রোকার নির্বাচন করা জরুরি।
• ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম : ব্যবহারকারী-বান্ধব এবং আধুনিক ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা উচিত।
• টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর : অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরের সাথে VPT-এর সমন্বয় করে ট্রেড করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
• ভলিউম বিশ্লেষণ : ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
• চার্ট প্যাটার্ন : বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন যেমন হেড অ্যান্ড শোল্ডারস, ডাবল টপ, ডাবল বটম ইত্যাদি শনাক্ত করতে পারলে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।

উপসংহার

ভলিউম প্রাইস ট্রেন্ড (VPT) একটি শক্তিশালী টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, এটি ব্যবহারের আগে এর মূল ধারণা, গণনা পদ্ধতি এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। অন্যান্য ইন্ডিকেটর এবং কৌশলগুলোর সাথে মিলিয়ে VPT ব্যবহার করলে ট্রেডিংয়ের সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে। মনে রাখতে হবে, কোনো ট্রেডিং কৌশলই ১০০% নির্ভুল নয়, তাই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ ध्यान দেওয়া উচিত।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ