Put Options

Put Options

Put Option হলো এক ধরনের ডেরিভেটিভ চুক্তি, যা বিনিয়োগকারীকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মূল্যে কোনো সম্পদ বিক্রয় করার অধিকার দেয়, কিন্তু বাধ্য করে না। এই অধিকারটি ব্যবহারের জন্য ক্রেতাকে একটি প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হয়। Put Option সাধারণত বিনিয়োগকারীরা তখন কেনেন যখন তারা মনে করেন কোনো সম্পদের দাম কমতে পারে।

Put Option এর মূল বিষয়াবলী

• স্টক (Stock): যেটির দামের উপর ভিত্তি করে অপশনটি তৈরি হয়েছে।
• স্ট্রাইক প্রাইস (Strike Price): যে নির্দিষ্ট মূল্যে Put Option ধারককে সম্পদ বিক্রি করার অধিকার থাকে।
• মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ (Expiration Date): যে তারিখের মধ্যে Put Option ব্যবহার করতে হয়। এই তারিখের পরে অপশনটি বাতিল হয়ে যায়।
• প্রিমিয়াম (Premium): Put Option কেনার জন্য ক্রেতাকে যে পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়।
• কল অপশন (Call Option): Put Option এর বিপরীত, যেখানে কেনার অধিকার থাকে। কল অপশন ট্রেডিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্কটি দেখুন।
• অপশন চেইন (Option Chain): একটি নির্দিষ্ট স্টকের জন্য উপলব্ধ বিভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের অপশনগুলির তালিকা।

Put Option কিভাবে কাজ করে?

ধরা যাক, একজন বিনিয়োগকারী মনে করেন যে XYZ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমতে পারে। বর্তমানে শেয়ারটির বাজারমূল্য ১০০ টাকা। তিনি ৯৫ টাকা স্ট্রাইক প্রাইসের Put Option কিনলেন, যার মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ এক মাস পরে এবং প্রিমিয়াম ৫ টাকা।

• যদি এক মাস পর XYZ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে ৯০ টাকা হয়, তবে বিনিয়োগকারী ৯৫ টাকা স্ট্রাইক প্রাইসে শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন। এর ফলে তার লাভ হবে (৯৫ - ৯০) - ৫ = ০ টাকা (প্রিমিয়াম বাদে)।
• যদি শেয়ারের দাম ১০০ টাকা বা তার বেশি থাকে, তবে বিনিয়োগকারী অপশনটি ব্যবহার করবেন না, কারণ বাজারে শেয়ার বিক্রি করে বেশি দাম পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে, তার ক্ষতি হবে শুধুমাত্র প্রিমিয়ামের পরিমাণ, অর্থাৎ ৫ টাকা।

Put Option কেনার কারণ

• দাম কমার প্রত্যাশা: যখন বিনিয়োগকারীরা মনে করেন কোনো সম্পদের দাম কমবে, তখন তারা Put Option কেনেন।
• ঝুঁকি হ্রাস: Put Option বিনিয়োগকারীদের তাদের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারের দাম কমার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। একে হেজিং বলা হয়।
• লিভারেজ (Leverage): কম প্রিমিয়াম পরিশোধ করে বেশি সংখ্যক শেয়ারের উপর নিয়ন্ত্রণ পাওয়া যায়।
• আয় তৈরি: কিছু কৌশল ব্যবহার করে Put Option বিক্রি করে আয় করা যেতে পারে, যদিও এতে ঝুঁকি থাকে। অপশন বিক্রি একটি জটিল কৌশল।

Put Option এর প্রকারভেদ

বিভিন্ন ধরনের Put Option রয়েছে, যা তাদের বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন হয়:

• ইউরোপীয়ান অপশন (European Option): মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখে শুধুমাত্র তখনই ব্যবহার করা যায়।
• আমেরিকান অপশন (American Option): মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের আগে যেকোনো সময় ব্যবহার করা যায়। আমেরিকান অপশন বনাম ইউরোপীয়ান অপশন-এর মধ্যে পার্থক্য জানা জরুরি।
• ইন-দ্য-মানি (In-the-Money): যখন স্ট্রাইক প্রাইস বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি থাকে।
• অ্যাট-দ্য-মানি (At-the-Money): যখন স্ট্রাইক প্রাইস বর্তমান বাজার মূল্যের সমান থাকে।
• আউট-অফ-দ্য-মানি (Out-of-the-Money): যখন স্ট্রাইক প্রাইস বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে কম থাকে।

Put Option এর প্রকারভেদ

অপশনের প্রকার	বৈশিষ্ট্য	ব্যবহার
ইউরোপীয়ান অপশন	মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখে ব্যবহারযোগ্য	দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত
আমেরিকান অপশন	মেয়াদ উত্তীর্ণের আগে যেকোনো সময় ব্যবহারযোগ্য	নমনীয়তা প্রয়োজন এমন বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত
ইন-দ্য-মানি অপশন	তাৎক্ষণিক লাভজনক	কম ঝুঁকিপূর্ণ
অ্যাট-দ্য-মানি অপশন	ব্রেক-ইভেন পয়েন্টে	মাঝারি ঝুঁকি
আউট-অফ-দ্য-মানি অপশন	ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উপর নির্ভরশীল	উচ্চ ঝুঁকি, উচ্চ লাভের সম্ভাবনা

Put Option এর মূল্য নির্ধারণ

Put Option এর মূল্য বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে, যেমন:

• বর্তমান স্টক মূল্য: স্টকের দাম স্ট্রাইক প্রাইসের তুলনায় যত কম হবে, Put Option এর মূল্য তত বেশি হবে।
• স্ট্রাইক প্রাইস: স্ট্রাইক প্রাইস যত বেশি হবে, Put Option এর মূল্য তত বেশি হবে।
• মেয়াদ উত্তীর্ণের সময়: মেয়াদ উত্তীর্ণের সময় যত বেশি হবে, Put Option এর মূল্য তত বেশি হবে।
• বিপরীত ঝুঁকি (Volatility): বাজারের অস্থিরতা যত বেশি হবে, Put Option এর মূল্য তত বেশি হবে। ভলাটিলিটি ট্রেডিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা।
• সুদের হার (Interest Rate): সুদের হার বাড়লে Put Option এর দাম কমতে পারে।
• লভ্যাংশ (Dividend): লভ্যাংশ প্রদান করা হলে Put Option এর দাম কমতে পারে।

ব্ল্যাক-স্কোলস মডেল (Black-Scholes Model) হলো অপশন মূল্যের একটি বহুল ব্যবহৃত গাণিতিক মডেল।

Put Option ট্রেডিং কৌশল

বিভিন্ন ধরনের Put Option ট্রেডিং কৌশল রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীরা তাদের ঝুঁকি এবং লাভের প্রত্যাশার উপর ভিত্তি করে ব্যবহার করতে পারেন:

• প্রোটেক্টিভ পুট (Protective Put): পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারের দাম কমার ঝুঁকি কমাতে এই কৌশল ব্যবহার করা হয়।
• ক্যাভার্ড পুট (Covered Put): শেয়ারের মালিকানা ধরে রেখে Put Option বিক্রি করে আয় তৈরি করা হয়।
• নেকড পুট (Naked Put): কোনো শেয়ারের মালিকানা না রেখে Put Option বিক্রি করা হয়, যা একটি ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল।
• স্প্রেড (Spread): একই ধরনের দুটি অপশন কেনা এবং বিক্রি করা, যেখানে স্ট্রাইক প্রাইস বা মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখে ভিন্নতা থাকে। অপশন স্প্রেড কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
• স্ট্র্যাডেল (Straddle): একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের Call এবং Put Option একসাথে কেনা।
• স্ট্র্যাংগল (Strangle): বিভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের Call এবং Put Option একসাথে কেনা।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং Put Option

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ব্যবহার করে Put Option ট্রেডিংয়ের জন্য উপযুক্ত সময় এবং স্ট্রাইক প্রাইস নির্ধারণ করা যেতে পারে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর হলো:

• মুভিং এভারেজ (Moving Average): দামের প্রবণতা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
• আরএসআই (Relative Strength Index): অতিরিক্ত কেনা বা বিক্রির পরিস্থিতি নির্দেশ করে।
• এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence): দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে।
• বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করে।
• ফিबोनाची রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল চিহ্নিত করে।

চার্ট প্যাটার্ন এবং ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে Put Option ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

ভলিউম বিশ্লেষণ এবং Put Option

ভলিউম বিশ্লেষণ Put Option ট্রেডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বাজারের গতিবিধি এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সম্পর্কে ধারণা দেয়।

• ভলিউম স্পাইক (Volume Spike): অস্বাভাবিক ভলিউম বৃদ্ধি বাজারের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নির্দেশ করে।
• ওপেন ইন্টারেস্ট (Open Interest): বর্তমানে কতগুলো অপশন চুক্তি খোলা আছে, তার সংখ্যা।
• ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP): একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গড় মূল্য নির্ধারণ করে।

ভলিউম প্রোফাইল এবং অর্ডার ফ্লো বিশ্লেষণ করে Put Option ট্রেডিংয়ের সুযোগ খুঁজে বের করা যায়।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

Put Option ট্রেডিং ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

• স্টপ-লস অর্ডার (Stop-Loss Order): সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করার জন্য ব্যবহার করুন।
• পজিশন সাইজিং (Position Sizing): আপনার মোট বিনিয়োগের একটি ছোট অংশ Put Option ট্রেডিংয়ে ব্যবহার করুন।
• ডাইভারসিফিকেশন (Diversification): বিভিন্ন সম্পদে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমানো যায়।
• নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: আপনার বিনিয়োগ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রয়োজনে কৌশল পরিবর্তন করুন।
• আবেগ নিয়ন্ত্রণ: আবেগপ্রবণ হয়ে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেবেন না।

উপসংহার

Put Option একটি শক্তিশালী আর্থিক উপকরণ, যা বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে। তবে, এটি জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণও বটে। Put Option ট্রেডিংয়ের আগে এর মূল বিষয়গুলি, কৌশল এবং ঝুঁকি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। সঠিক জ্ঞান এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে Put Option ট্রেডিং থেকে লাভবান হওয়া সম্ভব।

অপশন ট্রেডিং সম্পর্কে আরও জানতে, বিভিন্ন অনলাইন রিসোর্স এবং শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ