Pearson Correlation Coefficient

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগ

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগ (Pearson correlation coefficient), যা পিয়ারসন-এর আর (Pearson's r) নামেও পরিচিত, দুটি চলক-এর মধ্যে রৈখিক সম্পর্কের শক্তি এবং দিক পরিমাপ করার জন্য ব্যবহৃত একটি পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি। এটি -১ থেকে +১ এর মধ্যে একটি মান প্রদান করে। এই মান দুটি চলকের মধ্যে সম্পর্কের তীব্রতা এবং প্রকৃতি নির্দেশ করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, এই ধারণাটি টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস-এ বিভিন্ন অ্যাসেটের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগ সনাক্ত করতে সহায়ক হতে পারে।

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগের ধারণা

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগ মূলত দুটি চলকের মধ্যে রৈখিক সম্পর্ক নির্ণয় করে। এর মানে হলো, এটি নির্ধারণ করে যে একটি চলকের পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্য চলকটি একই দিকে (ধনাত্মক সম্পর্ক) নাকি বিপরীত দিকে (ঋণাত্মক সম্পর্ক) পরিবর্তিত হয় কিনা।

• +১ : নিখুঁত ধনাত্মক সম্পর্ক - একটি চলক বাড়লে অন্যটিও বাড়ে।
• ০ : কোনো সম্পর্ক নেই - চলক দুটির মধ্যে কোনো রৈখিক সম্পর্ক নেই।
• -১ : নিখুঁত ঋণাত্মক সম্পর্ক - একটি চলক বাড়লে অন্যটি কমে।

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগ শুধুমাত্র রৈখিক সম্পর্ক পরিমাপ করতে পারে। দুটি চলকের মধ্যে অরৈখিক সম্পর্ক থাকলে, এই সহগ সম্পর্কের সঠিক চিত্র নাও দিতে পারে। এক্ষেত্রে স্পিয়ারম্যান র‍্যাঙ্ক কোরিলেশন (Spearman's rank correlation) এর মতো অন্যান্য কোরিলেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগের সূত্র

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগ (r) গণনা করার সূত্রটি হলো:

r = Σ [(xi - x̄)(yi - Ȳ)] / √[Σ(xi - x̄)² Σ(yi - Ȳ)²]

এখানে,

• xi হলো প্রথম চলকের প্রতিটি ডেটা পয়েন্ট।
• yi হলো দ্বিতীয় চলকের প্রতিটি ডেটা পয়েন্ট।
• x̄ হলো প্রথম চলকের গড় মান।
• Ȳ হলো দ্বিতীয় চলকের গড় মান।
• Σ হলো যোগফল।

এই সূত্রটি ব্যবহার করে, দুটি চলকের ডেটা সেট থেকে তাদের মধ্যে সম্পর্কের মাত্রা নির্ণয় করা যায়।

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগের তাৎপর্য

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগের মান নিম্নলিখিতভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে:

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগের ব্যাখ্যা

সম্পর্কের তীব্রতা |

খুবই দুর্বল বা কোনো সম্পর্ক নেই |

দুর্বল সম্পর্ক |

মাঝারি সম্পর্ক |

শক্তিশালী সম্পর্ক |

খুবই শক্তিশালী সম্পর্ক |

এই মানগুলি শুধুমাত্র একটি সাধারণ নির্দেশিকা। সম্পর্কের তাৎপর্য বিচার করার সময় অন্যান্য বিষয়, যেমন নমুনার আকার এবং ডেটার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা উচিত।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ পিয়ারসন কোরিলেশন সহগের ব্যবহার

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ পিয়ারসন কোরিলেশন সহগ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে:

1. অ্যাসেট কোরrelation: দুটি অ্যাসেটের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে ট্রেডিংয়ের সুযোগ খুঁজে বের করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি দুটি স্টকের মধ্যে উচ্চ ধনাত্মক সম্পর্ক থাকে, তাহলে একটি স্টকের দাম বাড়লে অন্যটিরও দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

2. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: বিভিন্ন অ্যাসেটের মধ্যে সম্পর্ক জেনে পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য আনা যায়, যা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

3. যুগ্ম ট্রেডিং: দুটি সম্পর্কিত অ্যাসেটের মধ্যে দামের পার্থক্য (spread) থেকে লাভ করার জন্য এই কৌশল ব্যবহার করা হয়।

4. সূচক বিশ্লেষণ: কোনো নির্দিষ্ট সূচকের (index) সাথে কোনো স্টকের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে, সূচকের গতিবিধির উপর ভিত্তি করে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।

5. ভলিউম বিশ্লেষণ : ভলিউম এবং দামের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে বাজারের গতিবিধি বোঝা যায়।

উদাহরণ

ধরা যাক, আপনি দুটি স্টক - স্টক A এবং স্টক B - এর দামের মধ্যে সম্পর্ক জানতে চান। আপনি গত ৩০ দিনের দামের ডেটা সংগ্রহ করলেন এবং পিয়ারসন কোরিলেশন সহগ গণনা করলেন। যদি r = 0.8 হয়, তাহলে এর মানে হলো স্টক A এবং স্টক B-এর মধ্যে একটি শক্তিশালী ধনাত্মক সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ, স্টক A-এর দাম বাড়লে স্টক B-এর দামও বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। এই তথ্যের ভিত্তিতে, আপনি একটি ট্রেডিং কৌশল তৈরি করতে পারেন, যেখানে আপনি স্টক A-এর দাম বাড়লে স্টক B-এ কল অপশন (call option) কিনবেন।

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগের সীমাবদ্ধতা

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:

• এটি শুধুমাত্র রৈখিক সম্পর্ক পরিমাপ করে। অরৈখিক সম্পর্ক থাকলে এটি ভুল ফলাফল দিতে পারে।
• আউটলায়ার (outlier) বা ব্যতিক্রমী মান দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
• কোরrelation মানে কার্যকারণ (causation) নয়। দুটি চলকের মধ্যে সম্পর্ক থাকলেই একটি অন্যটির কারণ হবে এমন নয়।
• নমুনা আকারের উপর সংবেদনশীল। ছোট নমুনার আকারের ক্ষেত্রে, কোরিলেশন সহগ ভুল হতে পারে।

এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, পিয়ারসন কোরিলেশন সহগ একটি শক্তিশালী পরিসংখ্যানিক সরঞ্জাম, যা ডেটা বিশ্লেষণের জন্য বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।

অন্যান্য কোরিলেশন পদ্ধতি

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগের পাশাপাশি, আরও কিছু কোরিলেশন পদ্ধতি রয়েছে, যা বিভিন্ন ধরনের ডেটার জন্য উপযুক্ত:

• স্পিয়ারম্যান র‍্যাঙ্ক কোরিলেশন (Spearman’s rank correlation): এটি দুটি চলকের মধ্যে র‍্যাঙ্কের সম্পর্ক পরিমাপ করে। অরৈখিক সম্পর্কের জন্য এটি বেশি উপযোগী।
• কেন্ডাল’স টাউ (Kendall’s Tau): এটিও র‍্যাঙ্ক-ভিত্তিক কোরিলেশন পদ্ধতি, যা স্পিয়ারম্যানের চেয়ে কম সংবেদনশীল।
• পয়েন্ট-বাইসেরিয়াল কোরিলেশন (Point-biserial correlation): এটি একটি অবিচ্ছিন্ন চলক এবং একটি দ্বিখণ্ডিত চলকের মধ্যে সম্পর্ক পরিমাপ করে।

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগ গণনা করার জন্য সফটওয়্যার

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগ গণনা করার জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার এবং প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা যেতে পারে:

• মাইক্রোসফট এক্সেল (Microsoft Excel): এক্সেলের CORREL ফাংশন ব্যবহার করে সহজেই কোরিলেশন সহগ গণনা করা যায়।
• এসপিএসএস (SPSS): এটি একটি পরিসংখ্যানিক সফটওয়্যার প্যাকেজ, যা কোরিলেশন বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহ করে।
• আর (R): এটি একটি প্রোগ্রামিং ভাষা এবং সফটওয়্যার পরিবেশ, যা পরিসংখ্যানিক কম্পিউটিং এবং গ্রাফিক্সের জন্য ব্যবহৃত হয়।
• পাইথন (Python): পাইথনের SciPy লাইব্রেরি ব্যবহার করে কোরিলেশন সহগ গণনা করা যায়।

উপসংহার

পিয়ারসন কোরিলেশন সহগ দুটি চলকের মধ্যে রৈখিক সম্পর্ক পরিমাপ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, এটি অ্যাসেটগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে, ঝুঁকি কমাতে এবং ট্রেডিংয়ের সুযোগ সনাক্ত করতে সহায়ক হতে পারে। তবে, এর সীমাবদ্ধতাগুলি বিবেচনায় রাখা এবং অন্যান্য কোরিলেশন পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখা জরুরি। এছাড়াও, মানি ম্যানেজমেন্ট (Money Management) এবং ঝুঁকি মূল্যায়ন (Risk Assessment) এর মতো বিষয়গুলোও ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর (Technical Indicator) যেমন মুভিং এভারেজ (Moving Average), আরএসআই (RSI) এবং এমএসিডি (MACD) এর সাথে পিয়ারসন কোরিলেশন সহগের সমন্বিত ব্যবহার ট্রেডিং সিদ্ধান্তকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Pattern) এবং চার্ট প্যাটার্ন (Chart Pattern) বিশ্লেষণও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস (Fundamental Analysis)-এর মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা এবং বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পিয়ারসন কোরিলেশন সহগের ফলাফলকে আরও সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব।

ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট (Foreign Exchange Market), কমোডিটি মার্কেট (Commodity Market) এবং স্টক মার্কেট (Stock Market) -এর বিভিন্ন অ্যাসেটের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণে এই পদ্ধতি বিশেষভাবে উপযোগী।

ট্রেডিং সাইকোলজি (Trading Psychology) এবং ডিসিপ্লিন (Discipline) বজায় রাখার পাশাপাশি, সঠিক তথ্য ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে ট্রেডিংয়ের সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।

সেন্ট্রাল ব্যাংক পলিসি (Central Bank Policy) এবং ভূ-রাজনৈতিক ঘটনা (Geopolitical Events)-এর প্রভাবগুলিও ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা উচিত।

ঐতিহাসিক ডেটা (Historical Data) বিশ্লেষণ করে পিয়ারসন কোরিলেশন সহগের মাধ্যমে ভবিষ্যতের প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

ব্যাকটেস্টিং (Backtesting) এবং ডেমো ট্রেডিং (Demo Trading) এর মাধ্যমে যেকোনো ট্রেডিং কৌশল বাস্তবায়নের পূর্বে তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা উচিত।

অটোমেটেড ট্রেডিং (Automated Trading) বা অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং (Algorithmic Trading)-এর ক্ষেত্রে পিয়ারসন কোরিলেশন সহগকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

পোর্টফোলিও অপটিমাইজেশন (Portfolio Optimization)-এর জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যাসেটের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।

টাইম সিরিজ অ্যানালাইসিস (Time Series Analysis)-এর সাথে পিয়ারসন কোরিলেশন সহগের সমন্বয় করে আরও উন্নতমানের পূর্বাভাস পাওয়া যেতে পারে।

ডেটা মাইনিং (Data Mining) এবং মেশিন লার্নিং (Machine Learning) এর মাধ্যমে বৃহৎ ডেটা সেট থেকে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক খুঁজে বের করা সম্ভব।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা (Regulatory Bodies) এবং তাদের নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত থাকা একজন ট্রেডারের জন্য অত্যাবশ্যক।

ট্যাক্স ইমপ্লিকেশন (Tax Implications) সম্পর্কে জেনে ট্রেডিংয়ের লাভ-ক্ষতির হিসাব রাখা উচিত।

ফাইন্যান্সিয়াল মডেলিং (Financial Modeling)-এর মাধ্যমে সম্ভাব্য ট্রেডিং পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা যায়।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সরঞ্জাম (Risk Management Tools) ব্যবহার করে পোর্টফোলিওকে সুরক্ষিত রাখা যায়।

যোগাযোগ এবং নেটওয়ার্কিং (Communication and Networking)-এর মাধ্যমে অন্যান্য ট্রেডারদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।

শিক্ষামূলক সম্পদ (Educational Resources) এবং মেন্টরশিপ (Mentorship) একজন নতুন ট্রেডারকে দ্রুত শিখতে সাহায্য করতে পারে।

নৈতিক বিবেচনা (Ethical Considerations) এবং সততা (Integrity) বজায় রাখা একজন সফল ট্রেডারের জন্য অপরিহার্য।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ