Options Strategies

অপশন কৌশল

অপশন ট্রেডিং একটি জটিল বিষয়, যেখানে বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করে বিনিয়োগকারীরা তাদের ঝুঁকি কমাতে এবং লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। এই কৌশলগুলো মূলত অপশনের প্রকার (কল অপশন ও পুট অপশন) এবং তাদের বৈশিষ্ট্যগুলোর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অপশন কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো:

সূচনা

অপশন হলো এমন একটি চুক্তি যা ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মূল্যে কোনো সম্পদ (যেমন: স্টক, কমোডিটি, কারেন্সি ইত্যাদি) কেনার বা বিক্রি করার অধিকার দেয়, কিন্তু বাধ্য করে না। এই অধিকারের জন্য ক্রেতা বিক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট প্রিমিয়াম পরিশোধ করে। অপশন ট্রেডিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো বাজারের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা করে লাভবান হওয়া।

অপশন কৌশলগুলোর প্রকারভেদ

অপশন কৌশলগুলোকে সাধারণত তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:

১. মৌলিক কৌশল (Basic Strategies): এই কৌশলগুলো নতুন ট্রেডারদের জন্য উপযুক্ত, যেখানে একটি মাত্র অপশন কেনা বা বিক্রি করা হয়। ২. সমন্বিত কৌশল (Combination Strategies): এই কৌশলগুলোতে একাধিক অপশন ব্যবহার করা হয়, যেমন কল এবং পুট অপশনের মিশ্রণ। ৩. উন্নত কৌশল (Advanced Strategies): এই কৌশলগুলো অভিজ্ঞ ট্রেডারদের জন্য, যেখানে জটিল অপশন কম্বিনেশন এবং সময়কালের উপর ভিত্তি করে ট্রেড করা হয়।

মৌলিক কৌশল

• কল অপশন কেনা (Buying Call Options):

   এই কৌশলে, বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট স্ট্রাইক প্রাইসে (Strike Price) একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদ কেনার অধিকার কেনে। যদি সম্পদের বাজারমূল্য স্ট্রাইক প্রাইসের উপরে ওঠে, তবে বিনিয়োগকারী লাভবান হয়। এটি সাধারণত বুলিশ মার্কেট পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হয়।
   উদাহরণ: আপনি মনে করেন XYZ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়বে। তাই আপনি ১০০ টাকা স্ট্রাইক প্রাইসের একটি কল অপশন কিনলেন, যার প্রিমিয়াম ৫ টাকা। যদি শেয়ারের দাম ১২০ টাকায় পৌঁছায়, তবে আপনার লাভ হবে (১২০-১০০-৫) = ১৫ টাকা।

• পুট অপশন কেনা (Buying Put Options):

   এই কৌশলে, বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট স্ট্রাইক প্রাইসে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদ বিক্রি করার অধিকার কেনে। যদি সম্পদের বাজারমূল্য স্ট্রাইক প্রাইসের নিচে নেমে যায়, তবে বিনিয়োগকারী লাভবান হয়। এটি সাধারণত বেয়ারিশ মার্কেট পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হয়।
   উদাহরণ: আপনি মনে করেন ABC কোম্পানির শেয়ারের দাম কমবে। তাই আপনি ৫০ টাকা স্ট্রাইক প্রাইসের একটি পুট অপশন কিনলেন, যার প্রিমিয়াম ৩ টাকা। যদি শেয়ারের দাম ৪০ টাকায় নেমে যায়, তবে আপনার লাভ হবে (৫০-৪০-৩) = ৭ টাকা।

• কল অপশন বিক্রি করা (Selling Call Options):

   এই কৌশলে, বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট স্ট্রাইক প্রাইসে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদ বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা নেয়। এটি থেকে প্রিমিয়াম আয় হয়, তবে বাজার উপরে গেলে লোকসানের সম্ভাবনা থাকে।
   উদাহরণ: আপনি মনে করেন PQR কোম্পানির শেয়ারের দাম খুব বেশি বাড়বে না। তাই আপনি ৬০ টাকা স্ট্রাইক প্রাইসের একটি কল অপশন বিক্রি করলেন, যার প্রিমিয়াম ২ টাকা। যদি শেয়ারের দাম ৬০ টাকার নিচে থাকে, তবে আপনি প্রিমিয়ামটি লাভ হিসেবে রাখতে পারবেন। কিন্তু দাম ৬২ টাকায় উঠে গেলে, আপনাকে ২ টাকা লোকসানে শেয়ার বিক্রি করতে হবে।

• পুট অপশন বিক্রি করা (Selling Put Options):

   এই কৌশলে, বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট স্ট্রাইক প্রাইসে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদ কেনার বাধ্যবাধকতা নেয়। এটি থেকে প্রিমিয়াম আয় হয়, তবে বাজার নিচে গেলে লোকসানের সম্ভাবনা থাকে।
   উদাহরণ: আপনি মনে করেন LMN কোম্পানির শেয়ারের দাম খুব বেশি কমবে না। তাই আপনি ৪০ টাকা স্ট্রাইক প্রাইসের একটি পুট অপশন বিক্রি করলেন, যার প্রিমিয়াম ১ টাকা। যদি শেয়ারের দাম ৪০ টাকার উপরে থাকে, তবে আপনি প্রিমিয়ামটি লাভ হিসেবে রাখতে পারবেন। কিন্তু দাম ৩৫ টাকায় নেমে গেলে, আপনাকে ৫ টাকা লোকসানে শেয়ার কিনতে হবে।

সমন্বিত কৌশল

• স্ট্র্যাডল (Straddle):

   এই কৌশলে একই স্ট্রাইক প্রাইসের কল এবং পুট অপশন কেনা হয়। এটি ব্যবহার করা হয় যখন মার্কেটে বড় ধরনের মুভমেন্টের আশা করা হয়, কিন্তু কোন দিকে যাবে তা নিশ্চিত নয়। ভলাটিলিটি বেশি থাকলে এই কৌশল লাভজনক হতে পারে।

• স্ট্র্যাঙ্গল (Strangle):

   এই কৌশলে বিভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের কল এবং পুট অপশন কেনা হয়। স্ট্র্যাডলের চেয়ে এটি কম ঝুঁকিপূর্ণ, তবে লাভের সম্ভাবনাও কম।

• বুল কল স্প্রেড (Bull Call Spread):

   এই কৌশলে কম স্ট্রাইক প্রাইসের কল অপশন কেনা হয় এবং বেশি স্ট্রাইক প্রাইসের কল অপশন বিক্রি করা হয়। এটি বুলিশ মার্কেটে সীমিত লাভের জন্য ব্যবহৃত হয়।

• বেয়ার পুট স্প্রেড (Bear Put Spread):

   এই কৌশলে বেশি স্ট্রাইক প্রাইসের পুট অপশন কেনা হয় এবং কম স্ট্রাইক প্রাইসের পুট অপশন বিক্রি করা হয়। এটি বেয়ারিশ মার্কেটে সীমিত লাভের জন্য ব্যবহৃত হয়।

• বাটারফ্লাই স্প্রেড (Butterfly Spread):

   এই কৌশলে তিনটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন ব্যবহার করা হয় - একটি কম, একটি বেশি এবং দুটি মাঝের স্ট্রাইক প্রাইসে। এটি মার্কেটের সীমিত মুভমেন্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।

উন্নত কৌশল

• কন্ডর (Condor):

   এটি বাটারফ্লাই স্প্রেডের মতো, কিন্তু এখানে চারটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইস ব্যবহার করা হয়।

• স্কorpio (Scorpio):

   এটি একটি জটিল কৌশল, যেখানে বিভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদের অপশন ব্যবহার করা হয়।

• ক্যালেন্ডার স্প্রেড (Calendar Spread):

   এই কৌশলে একই স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন, কিন্তু ভিন্ন মেয়াদের কেনা এবং বিক্রি করা হয়।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

অপশন ট্রেডিংয়ে ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই কিছু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল অবলম্বন করা উচিত:

১. স্টপ-লস অর্ডার (Stop-Loss Order) ব্যবহার করা: এটি আপনার লোকসান সীমিত করতে সাহায্য করে। ২. পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন (Portfolio Diversification): বিভিন্ন সম্পদে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমানো যায়। ৩. সঠিক অপশন নির্বাচন: আপনার মার্কেট ভিউয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে অপশন নির্বাচন করা উচিত। ৪. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: আপনার ট্রেডগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করা উচিত। ৫. অল্প পরিমাণ দিয়ে শুরু করা: প্রথমে অল্প পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করা উচিত।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ

অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলো চিহ্নিত করা যায়। ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজারের গতিবিধির শক্তি এবং দুর্বলতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর হলো:

• মুভিং এভারেজ (Moving Averages)
• আরএসআই (Relative Strength Index)
• এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence)
• বলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands)

ভলিউম বিশ্লেষণের জন্য ওপেন ইন্টারেস্ট (Open Interest) এবং ভলিউম ডেটা ব্যবহার করা হয়।

উপসংহার

অপশন ট্রেডিং একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে, যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন অপশন কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা অর্জন করে বিনিয়োগকারীরা তাদের লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে পারেন। তবে, অপশন ট্রেডিংয়ের জটিলতা এবং ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে সতর্কতার সাথে ট্রেড করা উচিত। ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইজার-এর পরামর্শ নেওয়া এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

আরও জানতে:

• অপশন প্রাইসিং
• ব্ল্যাক-স্কোলস মডেল
• গ্রিকস (অপশন)
• ইম্প্লাইড ভলাটিলিটি
• অপশন চেইন
• মার্জিন (ফিনান্স)
• হেজিং (ফিনান্স)
• আর্বিট্রেজ
• ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ
• ইকোনমিক ক্যালেন্ডার
• ঝুঁকি এবং রিটার্ন
• পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট
• ট্রেডিং সাইকোলজি
• মার্কেট সেন্টিমেন্ট
• ট্যাক্সেশন (অপশন ট্রেডিং)

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ