ডিজেল চক্র

ডিজেল চক্র

ডিজেল চক্র একটি অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন-এর থার্মোডাইনামিক চক্র। এটি রুডলফ ডিজেল ১৮৯২ সালে আবিষ্কার করেন। এই চক্রটি গ্যাসোলিন ইঞ্জিনের ওটো চক্র থেকে ভিন্ন। ডিজেল চক্রে, বাতাস প্রথমে সংকুচিত করা হয়, যা বাতাসের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। এরপর জ্বালানি (ডিজেল) ইঞ্জিনের সিলিন্ডারে প্রবেশ করানো হয় এবং এটি উত্তপ্ত বাতাসের সংস্পর্শে এসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জ্বলে ওঠে। এই চক্রটি উচ্চ কম্প্রেশন অনুপাত এবং দক্ষতা প্রদানের জন্য পরিচিত।

ডিজেল চক্রের পর্যায়সমূহ

ডিজেল চক্র চারটি প্রধান পর্যায়ে বিভক্ত:

পর্যায়	বিবরণ	এই পর্যায়ে, বাতাস পিস্টন দ্বারা সংকুচিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি আইসেন্ট্রপিক, অর্থাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন ছাড়াই ঘটে। কম্প্রেশন অনুপাত সাধারণত গ্যাসোলিন ইঞ্জিনের চেয়ে অনেক বেশি হয় (১২:১ থেকে ২৫:১)।	যখন পিস্টন প্রায় ডেড সেন্টার-এ পৌঁছায়, তখন ডিজেল জ্বালানি ইঞ্জিনের সিলিন্ডারে স্প্রে করা হয়। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে জ্বালানি তাৎক্ষণিকভাবে জ্বলে ওঠে এবং ধ্রুব চাপে তাপ নির্গত হয়।	দহন প্রক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন গ্যাসগুলি পিস্টনকে ঠেলে দেয়, যা কার্যকর কাজ (work) করে। এই প্রসারণ প্রক্রিয়াটিও আইসেন্ট্রপিক।	অবশেষে, পিস্টন যখন তার সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছায়, তখন এক্সহস্ট ভালভ খুলে যায় এবং দহন গ্যাসের অবশিষ্ট তাপ নির্গত হয়। এই প্রক্রিয়াটি ধ্রুব আয়তনে ঘটে।

ডিজেল চক্রের দক্ষতা

ডিজেল চক্রের দক্ষতা ওটো চক্রের চেয়ে বেশি। এর কারণ হল ডিজেল চক্রে উচ্চ কম্প্রেশন অনুপাত ব্যবহার করা হয়। উচ্চ কম্প্রেশন অনুপাত মানে আরও বেশি তাপ শক্তিকে কাজে রূপান্তরিত করা যায়। একটি আদর্শ ডিজেল চক্রের দক্ষতা নিম্নলিখিত সূত্র দ্বারা প্রকাশ করা হয়:

η = 1 - (1/r^(γ-1))

এখানে,

• η = দক্ষতা
• r = কম্প্রেশন অনুপাত
• γ = গ্যাসের নির্দিষ্ট তাপের অনুপাত (সাধারণত ১.৪ এর কাছাকাছি)

ডিজেল ইঞ্জিনের সুবিধা

• উচ্চ দক্ষতা: ডিজেল ইঞ্জিনগুলি গ্যাসোলিন ইঞ্জিনের চেয়ে বেশি দক্ষ, যার ফলে প্রতি লিটার জ্বালানিতে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করা যায়।
• দীর্ঘস্থায়িত্ব: ডিজেল ইঞ্জিনগুলি সাধারণত গ্যাসোলিন ইঞ্জিনের চেয়ে বেশি টেকসই হয়, কারণ এদের যন্ত্রাংশগুলি আরও মজবুতভাবে তৈরি করা হয়।
• টর্ক: ডিজেল ইঞ্জিনগুলি কম গতিতে বেশি টর্ক উৎপন্ন করে, যা ভারী বোঝা বহন করার জন্য উপযুক্ত।
• জ্বালানি প্রাপ্যতা: ডিজেল সাধারণত বিশ্বব্যাপী সহজলভ্য।

ডিজেল ইঞ্জিনের অসুবিধা

• উচ্চ প্রাথমিক খরচ: ডিজেল ইঞ্জিনগুলির উৎপাদন খরচ গ্যাসোলিন ইঞ্জিনগুলির চেয়ে বেশি।
• শব্দ ও কম্পন: ডিজেল ইঞ্জিনগুলি গ্যাসোলিন ইঞ্জিনগুলির চেয়ে বেশি শব্দ এবং কম্পন উৎপন্ন করে।
• দূষণ: ডিজেল ইঞ্জিনগুলি নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx) এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM) এর মতো দূষণকারী গ্যাস নির্গত করে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। যদিও আধুনিক ডিজেল ইঞ্জিনগুলিতে এই দূষণ কমাতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
• ওজন: ডিজেল ইঞ্জিনগুলি সাধারণত গ্যাসোলিন ইঞ্জিনগুলির চেয়ে ভারী হয়।

ডিজেল ইঞ্জিনের ব্যবহার

ডিজেল ইঞ্জিন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন:

• পরিবহন: ট্রাক, বাস, লোкомоটিভ এবং জাহাজ-এর মতো ভারী যানবাহনে ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়।
• বিদ্যুৎ উৎপাদন: ডিজেল জেনারেটরগুলি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে যেখানে বিদ্যুৎ গ্রিড উপলব্ধ নয়।
• কৃষি: ট্রাক্টর এবং অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতিগুলিতে ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়।
• নির্মাণ: এক্সকাভেটর, বুলডোজার এবং অন্যান্য নির্মাণ সরঞ্জামগুলিতে ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়।

আধুনিক ডিজেল প্রযুক্তিসমূহ

আধুনিক ডিজেল ইঞ্জিনগুলি দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দূষণ কমাতে বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এর মধ্যে কয়েকটি হল:

• ডিরেক্ট ফুয়েল ইনজেকশন: এই প্রযুক্তিতে, জ্বালানি সরাসরি সিলিন্ডারের মধ্যে স্প্রে করা হয়, যা দহন প্রক্রিয়াকে আরও দক্ষ করে তোলে।
• টার্বোচার্জিং: টার্বোচার্জার ইঞ্জিনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং জ্বালানি দক্ষতা উন্নত করে।
• ইন্টারকুলিং: ইন্টারকুলার কম্প্রেশন প্রক্রিয়ার সময় বাতাসের তাপমাত্রা কমিয়ে ইঞ্জিনের দক্ষতা বাড়ায়।
• কমন রেল: এই সিস্টেমে, জ্বালানি একটি সাধারণ রেল লাইনে জমা থাকে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ইনজেক্ট করা হয়, যা দহন প্রক্রিয়াকে আরও নির্ভুলভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
• ডাইজেল পার্টিকুলেট ফিল্টার (DPF): এই ফিল্টারগুলি নিষ্কাশন গ্যাস থেকে ক্ষতিকারক পার্টিকুলেট ম্যাটার অপসারণ করে।
• সিলেক্টিভ ক্যাটালাইটিক রিডাকশন (SCR): এই প্রযুক্তিটি নিষ্কাশন গ্যাস থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx) কমাতে ব্যবহৃত হয়।

ডিজেল চক্রের প্রকারভেদ

ডিজেল চক্রের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, যা ইঞ্জিনের নকশা এবং ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান প্রকারভেদ নিচে উল্লেখ করা হলো:

• টু-স্ট্রোক ডিজেল ইঞ্জিন: এই ইঞ্জিনে, পিস্টন দুটি স্ট্রোকে সম্পন্ন করে একটি চক্র সম্পন্ন করে। এটি সাধারণত ছোট এবং হালকা ওজনের হয়, তবে এর দক্ষতা কম থাকে।
• ফোর-স্ট্রোক ডিজেল ইঞ্জিন: এই ইঞ্জিনে, পিস্টন চারটি স্ট্রোকে সম্পন্ন করে একটি চক্র সম্পন্ন করে। এটি বেশি দক্ষ এবং সাধারণত বড় আকারের যানবাহনে ব্যবহৃত হয়।
• ভেরিয়েবল কম্প্রেশন রেশিও (VCR) ইঞ্জিন: এই ইঞ্জিনে, কম্প্রেশন অনুপাত পরিবর্তন করা যায়, যা ইঞ্জিনের দক্ষতা এবং কর্মক্ষমতা উভয়ই উন্নত করে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সংযোগ

যদিও ডিজেল চক্র সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্কিত নয়, তবে অর্থনৈতিক সূচক এবং জ্বালানি বাজারের গতিবিধি ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিজেল এবং অপরিশোধিত তেলের দামের পরিবর্তনগুলি বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ডিজেলের দাম বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়, তাহলে একজন ট্রেডার 'কল' অপশন কিনতে পারে। আবার, দাম কমার পূর্বাভাস দিলে 'পুট' অপশন কেনা যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ সহ বিভিন্ন ট্রেডিং কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে।

• টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: ঐতিহাসিক মূল্য ডেটা এবং চার্ট প্যাটার্ন ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ মূল্য নির্ধারণ করা।
• ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ: অর্থনৈতিক সূচক, সরবরাহ এবং চাহিদা, এবং ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাগুলির উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ মূল্য নির্ধারণ করা।
• ভলিউম বিশ্লেষণ: ট্রেডিং ভলিউমের পরিবর্তনগুলি বিশ্লেষণ করে বাজারের প্রবণতা বোঝা।
• মুভিং এভারেজ : একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গড় মূল্য গণনা করে বাজারের প্রবণতা নির্ধারণ করা।
• আরএসআই (রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স): একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দামের পরিবর্তনের মাত্রা পরিমাপ করা।
• MACD (মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্স): দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি বোঝা।
• বলিঙ্গার ব্যান্ডস : দামের অস্থিরতা পরিমাপ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
• ফি Fibonacci রিট্রেসমেন্ট : সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়।
• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন : বাজারের প্রবণতা এবং সম্ভাব্য মূল্য পরিবর্তনগুলি সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
• সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল : যে মূল্যস্তরে চাহিদা বা সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
• ট্রেডিং ভলিউম : একটি নির্দিষ্ট সময়ে কেনা বেচার পরিমাণ।
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা : ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি কমানোর কৌশল।
• পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন : বিভিন্ন ধরনের সম্পদে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমানো।
• মার্জিন ট্রেডিং : ব্রোকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ট্রেড করা।
• স্টপ-লস অর্ডার : একটি নির্দিষ্ট মূল্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড বন্ধ করার নির্দেশ।

ডিজেল চক্র এবং এর সাথে সম্পর্কিত প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান, জ্বালানি বাজারের গতিবিধি বুঝতে এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হতে পারে।

আরও দেখুন

• অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন
• ওটো চক্র
• কম্প্রেশন অনুপাত
• থার্মোডাইনামিক্স
• ইঞ্জিন দক্ষতা
• ডিজেল ইঞ্জিন
• গ্যাসোলিন ইঞ্জিন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ