অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিট

অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিট

অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিট হল একটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে কোনো ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন, ডকুমেন্ট অথবা অন্য কোনো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম কতটা ব্যবহারকারী-বান্ধব, তা যাচাই করা হয়। বিশেষ করে শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের জন্য এটি কতটা সহজলভ্য, তা দেখা হয়। এই অডিট মূলত নিশ্চিত করে যে, বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও যেন কোনো রকম বাধা ছাড়াই ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিট শুধুমাত্র অক্ষম ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করে না, বরং এটি বৃহত্তর সংখ্যক ব্যবহারকারীকে আকৃষ্ট করে এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করে।

অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিটের গুরুত্ব

ডিজিটাল জগতে অ্যাক্সেসিবিলিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর কিছু প্রধান কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

• আইনগত বাধ্যবাধকতা: অনেক দেশেই অ্যাক্সেসিবিলিটি সম্পর্কিত আইন রয়েছে। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যামেরিকানস উইথ ডিসএবিলিটিস অ্যাক্ট (ADA) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওয়েব অ্যাক্সেসিবিলিটি ডিরেক্টিভ (Web Accessibility Directive)। এই আইন অনুযায়ী, সরকারি এবং বেসরকারি উভয় খাতের ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে অ্যাক্সেসিবল হতে হয়।
• নৈতিক দায়িত্ব: অ্যাক্সেসিবিলিটি একটি নৈতিক বিষয়। প্রত্যেক মানুষেরই তথ্য ও প্রযুক্তির সমান সুযোগ পাওয়া উচিত।
• ব্যবসায়িক সুবিধা: অ্যাক্সেসিবল ওয়েবসাইট তৈরি করলে তা বৃহত্তর audience-এর কাছে পৌঁছায়, যা ব্যবসার জন্য লাভজনক হতে পারে। এছাড়াও, এটি ব্র্যান্ডের সুনাম বৃদ্ধি করে।
• সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO): অ্যাক্সেসিবল ওয়েবসাইটগুলো সাধারণত সার্চ ইঞ্জিনে ভালো র‍্যাঙ্ক করে, কারণ সার্চ ইঞ্জিনগুলো অ্যাক্সেসিবিলিটি বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়।

অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিটের প্রকারভেদ

অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা নির্দিষ্ট প্রয়োজন ও লক্ষ্যের ওপর নির্ভর করে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:

১. স্বয়ংক্রিয় অডিট (Automated Audit): এই ধরনের অডিট বিভিন্ন সফটওয়্যার ও টুলের মাধ্যমে করা হয়। এগুলো ওয়েবসাইটের কোড স্ক্যান করে অ্যাক্সেসিবিলিটির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে। উদাহরণস্বরূপ, WAVE, Axe, এবং Siteimprove-এর মতো টুলস ব্যবহার করা হয়। এই অডিটগুলো দ্রুত এবং সহজে করা যায়, তবে এগুলোর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ, এগুলো শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট সমস্যা চিহ্নিত করতে পারে, যেমন - বিকল্প টেক্সট missing থাকা, রঙের কনট্রাস্ট কম থাকা ইত্যাদি।

২. ম্যানুয়াল অডিট (Manual Audit): এই অডিট অভিজ্ঞ অ্যাক্সেসিবিলিটি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা করা হয়। তারা ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করেন। যেমন, স্ক্রিন রিডার ব্যবহার করে কনটেন্ট শোনা, শুধুমাত্র কীবোর্ড ব্যবহার করে নেভিগেট করা, অথবা ভয়েস recognition সফটওয়্যার ব্যবহার করে সাইটটি কন্ট্রোল করা ইত্যাদি। এই অডিট স্বয়ংক্রিয় অডিটের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য, কারণ এটি ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতার বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে পারে।

৩. সহায়ক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অডিট (Assistive Technology Audit): এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন সহায়ক প্রযুক্তি (Assistive Technology) যেমন - স্ক্রিন রিডার, স্ক্রিন ম্যাগনিফায়ার, ভয়েস recognition সফটওয়্যার ব্যবহার করে ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন পরীক্ষা করা হয়। এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যবহারকারীরা কীভাবে সাইটটি ব্যবহার করছেন, তা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যায়।

৪. ব্যবহারকারী পরীক্ষা (User Testing): এই পদ্ধতিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের একটি গ্রুপকে ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে দেওয়া হয় এবং তাদের মতামত ও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করা হয়। এটি অ্যাক্সেসিবিলিটি সমস্যার গভীরতা বুঝতে এবং ব্যবহারিক সমাধান খুঁজে বের করতে সহায়ক।

অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিটের মূল উপাদান

একটি সম্পূর্ণ অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিটে নিম্নলিখিত উপাদানগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে:

• পোর্‌স (POUR) নীতি: পোর্‌স (Perceivable, Operable, Understandable, Robust) হলো অ্যাক্সেসিবিলিটির চারটি মূল ভিত্তি।

   *   Perceivable (অনুভবযোগ্য): তথ্য এবং ব্যবহারকারীর ইন্টারফেস উপাদানগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে, যাতে ব্যবহারকারীরা তা উপলব্ধি করতে পারে। এর মধ্যে বিকল্প টেক্সট, ক্যাপশন, এবং অডিও ডিসক্রিপশন অন্তর্ভুক্ত।
   *   Operable (ব্যবহারযোগ্য): ব্যবহারকারীর ইন্টারফেস উপাদানগুলো পরিচালনা করার জন্য যেন বিভিন্ন উপায় থাকে, যেমন - কীবোর্ড, ভয়েস কমান্ড, অথবা অন্যান্য ইনপুট ডিভাইস।
   *   Understandable (বোঝার মতো): কনটেন্ট এবং ইন্টারফেসের ভাষা সহজ ও বোধগম্য হতে হবে।
   *   Robust (নির্ভরযোগ্য): ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনটি যেন বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারকারী এজেন্ট (যেমন - ব্রাউজার, স্ক্রিন রিডার) এবং প্রযুক্তি সমর্থন করে।

• ডব্লিউসিএজি (WCAG): ওয়েব কনটেন্ট অ্যাক্সেসিবিলিটি গাইডলাইন (Web Content Accessibility Guidelines) হলো অ্যাক্সেসিবিলিটির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ড। এটি বিভিন্ন অ্যাক্সেসিবিলিটি সমস্যা সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে। WCAG 2.1 এবং WCAG 2.2 বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত স্ট্যান্ডার্ড।

• ধারা ৫০৮ (Section 508): এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আইন, যা ফেডারেল সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইট এবং ইলেকট্রনিক ও তথ্য প্রযুক্তিকে অ্যাক্সেসিবল করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিট করার পদক্ষেপ

অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিট একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা উচিত। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ উল্লেখ করা হলো:

১. পরিকল্পনা (Planning): অডিটের উদ্দেশ্য, সুযোগ এবং সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। কোন স্ট্যান্ডার্ড (যেমন - WCAG 2.1) অনুসরণ করা হবে, তা ঠিক করতে হবে।

২. ডেটা সংগ্রহ (Data Collection): ওয়েবসাইটের URL, অ্যাপ্লিকেশন কোড, এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।

৩. স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষা (Automated Testing): WAVE, Axe, Siteimprove-এর মতো টুলস ব্যবহার করে প্রাথমিক স্ক্যানিং করতে হবে এবং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে।

৪. ম্যানুয়াল পরীক্ষা (Manual Testing): অভিজ্ঞ অ্যাক্সেসিবিলিটি বিশেষজ্ঞরা ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করবেন।

৫. সহায়ক প্রযুক্তি পরীক্ষা (Assistive Technology Testing): স্ক্রিন রিডার, স্ক্রিন ম্যাগনিফায়ার, ভয়েস recognition সফটওয়্যার ব্যবহার করে পরীক্ষা করতে হবে।

৬. ব্যবহারকারী পরীক্ষা (User Testing): প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের একটি গ্রুপকে ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে দিয়ে তাদের মতামত নিতে হবে।

৭. প্রতিবেদন তৈরি (Report Generation): অডিটের ফলাফল, চিহ্নিত সমস্যা, এবং সমাধানের সুপারিশ উল্লেখ করে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে।

৮. সংশোধন ও পুনরায় পরীক্ষা (Remediation and Retesting): প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে এবং পুনরায় পরীক্ষা করে নিশ্চিত করতে হবে যে অ্যাক্সেসিবিলিটি উন্নত হয়েছে।

অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিটের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম

অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিট করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম (Tools) পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য সরঞ্জাম হলো:

• WAVE (Web Accessibility Evaluation Tool): একটি অনলাইন টুল, যা ওয়েবসাইটের অ্যাক্সেসিবিলিটি সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে।
• Axe: একটি ব্রাউজার এক্সটেনশন এবং CLI টুল, যা অ্যাক্সেসিবিলিটি সমস্যাগুলো খুঁজে বের করে।
• Siteimprove: একটি বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্ম, যা ওয়েবসাইট অ্যাক্সেসিবিলিটি নিরীক্ষণ এবং উন্নত করতে সাহায্য করে।
• JAWS (Job Access With Speech): একটি জনপ্রিয় স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যার।
• NVDA (NonVisual Desktop Access): একটি ওপেন সোর্স স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যার।
• VoiceOver: অ্যাপলের তৈরি একটি স্ক্রিন রিডার, যা macOS এবং iOS ডিভাইসে উপলব্ধ।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং অ্যাক্সেসিবিলিটি

ওয়েব ডেভেলপমেন্টের সময় অ্যাক্সেসিবিলিটি বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি। কিছু সাধারণ টিপস নিচে দেওয়া হলো:

• সঠিক HTML স্ট্রাকচার ব্যবহার করুন।
• বিকল্প টেক্সট (Alt Text) যোগ করুন।
• রঙের কনট্রাস্ট যথেষ্ট রাখুন।
• কীবোর্ড নেভিগেশন নিশ্চিত করুন।
• ফর্মের লেবেলগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করুন।
• ARIA (Accessible Rich Internet Applications) অ্যাট্রিবিউট ব্যবহার করুন।

ডিজিটাল মার্কেটিং এবং অ্যাক্সেসিবিলিটি

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে অ্যাক্সেসিবিলিটি গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাক্সেসিবল কনটেন্ট তৈরি করলে তা সার্চ ইঞ্জিনে ভালো র‍্যাঙ্ক করে এবং বৃহত্তর audience-এর কাছে পৌঁছায়।

অ্যাক্সেসিবিলিটি এবং ভলিউম বিশ্লেষণ

অ্যাক্সেসিবিলিটি নিশ্চিত করার মাধ্যমে ওয়েবসাইটের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং কৌশলগত পরিকল্পনা এর মাধ্যমে অ্যাক্সেসিবিলিটি উন্নত করা যায়।

উপসংহার

অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিট একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে সকলের জন্য ব্যবহারযোগ্য করে তোলে। এটি শুধুমাত্র আইনগত বাধ্যবাধকতা নয়, বরং একটি নৈতিক দায়িত্বও। অ্যাক্সেসিবিলিটি নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল বিশ্ব তৈরি করতে পারি।

আরও জানতে:

• ওয়েব অ্যাক্সেসিবিলিটি ইনিশিয়েটিভ (WAI)
• ডব্লিউসিএজি (WCAG)
• ধারা ৫০৮ (Section 508)
• পোর্‌স (POUR) নীতি
• স্ক্রিন রিডার

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ