View source for ব্রেক্সিট

ব্রেক্সিট : বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের প্রেক্ষাপট

ভূমিকা

ব্রেক্সিট (Brexit) একটি বহুল আলোচিত এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব সৃষ্টিকারী ঘটনা। এটি মূলত ‘ব্রিটিশ এক্সিট’ (British exit)-এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যা যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (European Union) থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। ২০১৬ সালের ২৩শে জুন অনুষ্ঠিত গণভোটের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের জনগণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে রায় দেয়। এরপর দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছরের জটিল প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ৩১শে জানুয়ারি যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যায়। ব্রেক্সিটের এই ঘটনা [[বৈশ্বিক অর্থনীতি]] এবং [[আর্থিক বাজার]]ে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসে। এই নিবন্ধে ব্রেক্সিটের কারণ, প্রভাব এবং [[বাইনারি অপশন ট্রেডিং]]য়ের ক্ষেত্রে এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

ব্রেক্সিটের প্রেক্ষাপট ও কারণ

যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশটি ১৯৭৩ সালে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সম্প্রদয়ে (European Economic Community) যোগদান করে। প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা লাভের উদ্দেশ্য থাকলেও সময়ের সাথে সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো নিয়ে যুক্তরাজ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। ব্রেক্সিটের প্রধান কারণগুলো হলো:

১. সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন: ব্রেক্সিটের সমর্থকদের মূল যুক্তি ছিল, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য থাকার কারণে যুক্তরাজ্যের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তারা মনে করত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন ও বিধিবিধান যুক্তরাজ্যের নিজস্ব আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে।

২. অভিবাসন: ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবাধ চলাচলের নীতির কারণে অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র থেকে যুক্তরাজ্যে ব্যাপক অভিবাসন ঘটে। এটি স্থানীয় কর্মসংস্থান এবং সামাজিক কাঠামোর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে অনেকে মনে করতেন।

৩. অর্থনৈতিক কারণ: ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে থাকার কারণে যুক্তরাজ্যকে বাজেট দিতে হতো এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণে সীমাবদ্ধতা অনুভব করত।

৪. রাজনৈতিক কারণ: যুক্তরাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে রাজনৈতিক বিভেদ ছিল। কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরোধী মনোভাব প্রবল ছিল, যা ব্রেক্সিট গণভোটের আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ব্রেক্সিটের প্রভাব

ব্রেক্সিটের ফলে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়েই বিভিন্ন ধরনের প্রভাবের সম্মুখীন হয়েছে। এর কিছু প্রধান প্রভাব নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. অর্থনৈতিক প্রভাব: ব্রেক্সিটের কারণে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। [[মুদ্রা বাজার]]ে পাউন্ড স্টার্লিংয়ের (Pound Sterling) মূল্য হ্রাস পায় এবং [[শেয়ার বাজার]]ে অস্থিরতা দেখা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্য কমে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যের [[মোট দেশজ উৎপাদন]] (GDP) -এর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

২. রাজনৈতিক প্রভাব: ব্রেক্সিটের ফলে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করেন এবং থেরেসা মে নতুন প্রধানমন্ত্রী হন। পরবর্তীতে বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।

৩. সামাজিক প্রভাব: ব্রেক্সিটের কারণে সমাজে বিভেদ সৃষ্টি হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে ও বিপক্ষে জনমত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। অভিবাসন নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হয়।

৪. বাণিজ্য সম্পর্ক: ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করতে বাধ্য হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বাণিজ্য কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে ব্রেক্সিটের প্রভাব

ব্রেক্সিট [[বাইনারি অপশন ট্রেডিং]]য়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। বাইনারি অপশন হলো এমন একটি আর্থিক উপকরণ, যেখানে বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের মূল্য বাড়বে নাকি কমবে, তা অনুমান করে ট্রেড করেন। ব্রেক্সিটের কারণে বিভিন্ন সম্পদের মূল্যে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে, যা বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য সুযোগ এবং ঝুঁকি উভয়ই তৈরি করেছে।

১. মুদ্রা বাজারে প্রভাব: ব্রেক্সিটের ফলে পাউন্ড স্টার্লিংয়ের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। বাইনারি অপশন ট্রেডাররা এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে পাউন্ডের দাম কমবে এমন ট্রেড করে লাভবান হতে পারত। আবার, ইউরোর (Euro) দাম বাড়ার সম্ভাবনাতেও ট্রেড করা যেত। [[ফরেক্স ট্রেডিং]] এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মধ্যে সম্পর্ক এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

২. শেয়ার বাজারে প্রভাব: ব্রেক্সিটের কারণে [[লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ]] (London Stock Exchange) এবং অন্যান্য ইউরোপীয় শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যায়, যা বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে।

৩. রাজনৈতিক অস্থিরতা: ব্রেক্সিটের কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়, যা বাজারের পূর্বাভাসকে কঠিন করে তোলে। বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য রাজনৈতিক ঘটনাগুলোর উপর নজর রাখা এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

৪. অর্থনৈতিক সূচক: ব্রেক্সিটের ফলে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক যেমন [[মুদ্রাস্ফীতি]], [[বেকারত্বের হার]] এবং [[শিল্প উৎপাদন]] -এর উপর প্রভাব পড়ে। এই সূচকগুলো বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিতে পারে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের কৌশল

ব্রেক্সিটের প্রেক্ষাপটে বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য কিছু কৌশল নিচে দেওয়া হলো:

১. ট্রেন্ড অনুসরণ: ব্রেক্সিটের কারণে বাজারে একটি নির্দিষ্ট ট্রেন্ড তৈরি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পাউন্ড স্টার্লিংয়ের দাম কমতে থাকলে, ডাউন ট্রেন্ড অনুসরণ করে ট্রেড করা যেতে পারে। [[টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস]] এক্ষেত্রে খুব উপযোগী।

২. সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল: সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলো চিহ্নিত করে বাইনারি অপশন ট্রেড করা যেতে পারে। যখন কোনো সম্পদের মূল্য সাপোর্ট লেভেলে পৌঁছায়, তখন সেটি বাউন্স ব্যাক করতে পারে, এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলে পৌঁছালে দাম কমতে পারে।

৩. নিউজ ট্রেডিং: ব্রেক্সিট সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ খবর এবং ঘোষণার উপর নজর রেখে ট্রেড করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ইতিবাচক বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করা হয়, তবে পাউন্ড স্টার্লিংয়ের দাম বাড়তে পারে।

৪. রিস্ক ম্যানেজমেন্ট: বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই, ট্রেড করার সময় স্টপ-লস (stop-loss) এবং টেক-প্রফিট (take-profit) ব্যবহার করা উচিত। এছাড়াও, মোট বিনিয়োগের একটি ছোট অংশ দিয়ে ট্রেড করা উচিত। [[ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা]] বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ভলিউম বিশ্লেষণ

ব্রেক্সিটের সময়কালে [[ভলিউম বিশ্লেষণ]] বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার ছিল। ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজারের গতিবিধি এবং বিনিয়োগকারীদের মনোভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

১. ভলিউম স্পাইক: যখন কোনো সম্পদের ভলিউম হঠাৎ করে বেড়ে যায়, তখন এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দেয়। এটি সাধারণত কোনো বড় খবর বা ঘোষণার কারণে হয়ে থাকে।

২. ভলিউম কনফার্মেশন: যদি কোনো নির্দিষ্ট ট্রেন্ডের সাথে ভলিউম বৃদ্ধি পায়, তবে সেই ট্রেন্ডটি শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৩. ডাইভারজেন্স: যদি দাম এবং ভলিউমের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়, তবে এটি একটি বিপরীতমুখী ট্রেন্ডের পূর্বাভাস দিতে পারে।

টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য কিছু জনপ্রিয় টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা যেতে পারে:

১. মুভিং এভারেজ (Moving Average): এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদের গড় মূল্য দেখায় এবং ট্রেন্ড নির্ধারণে সাহায্য করে।

২. রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স (RSI): এটি সম্পদের অতিরিক্ত ক্রয় (overbought) বা অতিরিক্ত বিক্রয় (oversold) অবস্থা নির্দেশ করে।

৩. ম্যাকডি (MACD): এটি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক দেখায় এবং ট্রেডিং সংকেত প্রদান করে।

৪. বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): এটি দামের অস্থিরতা পরিমাপ করে এবং সম্ভাব্য ব্রেকআউট (breakout) চিহ্নিত করে।

ব্রেক্সিটের পরবর্তী পরিস্থিতি

ব্রেক্সিটের পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়েই নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে নতুন বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যুক্তরাজ্যের অভাব পূরণ করতে হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে আরও সহযোগিতা বাড়াতে হয়েছে।

বর্তমানে, ব্রেক্সিটের প্রভাব সম্পূর্ণরূপে মূল্যায়ন করা কঠিন। তবে, এটি স্পষ্ট যে ব্রেক্সিট বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে। বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য ব্রেক্সিটের পরবর্তী পরিস্থিতি একটি সুযোগ এবং ঝুঁকি উভয়ই নিয়ে আসতে পারে।

উপসংহার

ব্রেক্সিট একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক ঘটনা, যা বিশ্ব অর্থনীতি এবং আর্থিক বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য ব্রেক্সিট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এটি ট্রেডিংয়ের সুযোগ এবং ঝুঁকি উভয়ই তৈরি করে। ব্রেক্সিটের প্রেক্ষাপট, প্রভাব এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের কৌশলগুলো ভালোভাবে বুঝে ট্রেড করলে লাভবান হওয়া সম্ভব। তবে, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রতি সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।

[[বৈশ্বিক অর্থনীতি]], [[ইউরোপীয় ইউনিয়ন]], [[যুক্তরাজ্য]], [[বাইনারি অপশন]], [[ফরেক্স ট্রেডিং]], [[শেয়ার বাজার]], [[মুদ্রা বাজার]], [[মোট দেশজ উৎপাদন]], [[মুদ্রাস্ফীতি]], [[বেকারত্বের হার]], [[শিল্প উৎপাদন]], [[টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস]], [[ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা]], [[ভলিউম বিশ্লেষণ]], [[মুভিং এভারেজ]], [[রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স]], [[ম্যাকডি]], [[বলিঙ্গার ব্যান্ড]], [[লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ]]

[[Category:ব্রেক্সিট]]

== এখনই ট্রেডিং শুরু করুন ==
[https://affiliate.iqbroker.com/redir/?aff=1085&instrument=options_WIKI IQ Option-এ নিবন্ধন করুন] (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10)
[http://redir.forex.pm/pocketo Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন] (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
=== আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন ===
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন [https://t.me/strategybin @strategybin] এবং পান:
✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত
✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ
✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি
✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ