View source for বিল্যান্সিয়াল শীট

বিল্যান্সিয়াল শীট : একটি বিস্তারিত আলোচনা

বিল্যান্সিয়াল শীট বা স্থিতিশীল বিবরণী একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো [[প্রতিষ্ঠানের]] আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে একটি সারসংক্ষেপ চিত্র। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ [[আর্থিক বিবরণী]] যা প্রতিষ্ঠানের [[সম্পদ]], [[দায়]] এবং [[মালিকের স্বত্ব]] উপস্থাপন করে। এই তিনটি উপাদানের মধ্যে সম্পর্কটি একটি মৌলিক হিসাব সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়:

সম্পদ = দায় + মালিকের স্বত্ব

বিল্যান্সিয়াল শীটকে প্রায়শই একটি "স্냅শট" হিসাবে উল্লেখ করা হয়, কারণ এটি একটি নির্দিষ্ট তারিখের ভিত্তিতে তৈরি করা হয় এবং সময়ের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক পরিবর্তনগুলি দেখায় না। এটি [[আয় বিবরণী]] এবং [[নগদ প্রবাহ বিবরণী]]-এর সাথে একত্রে ব্যবহার করা হয়, যা সময়ের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের কর্মক্ষমতা এবং নগদ প্রবাহের তথ্য প্রদান করে।

বিল্যান্সিয়াল শীটের উপাদানসমূহ

বিল্যান্সিয়াল শীটের প্রধান উপাদানগুলো হলো:

১. সম্পদ (Assets):
  সম্পদ হলো সেইসব জিনিস যা একটি প্রতিষ্ঠান owns করে বা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান করতে পারে। সম্পদকে সাধারণত দুটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়:

  * চলতি সম্পদ (Current Assets): এগুলি এক বছরের মধ্যে বা স্বাভাবিক অপারেটিং চক্রের মধ্যে নগদে রূপান্তরিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: [[নগদ]], [[হিসাব receivable]], [[ইনভেন্টরি]] এবং [[প্রিপ্রেইড খরচ]]।
  * স্থায়ী সম্পদ (Non-Current Assets): এগুলি দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ, যা এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ: [[জমির]] মতো [[স্থাবর সম্পত্তি]], [[যন্ত্রপাতি]], [[বিনিয়োগ]] এবং [[অস্পর্শনীয় সম্পদ]] (যেমন [[গডউইল]] ও [[পেটেন্ট]])।

২. দায় (Liabilities):
  দায় হলো প্রতিষ্ঠানের উপর তৃতীয় পক্ষের দাবি বা ঋণ। দায়কেও দুটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা হয়:

  * চলতি দায় (Current Liabilities): এগুলি এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ: [[হিসাব payable]], [[স্বল্পমেয়াদী ঋণ]], [[বকেয়া খরচ]] এবং [[কর payable]]।
  * দীর্ঘমেয়াদী দায় (Non-Current Liabilities): এগুলি এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ: [[দীর্ঘমেয়াদী ঋণ]], [[বন্ধকী]], এবং [[ডিফার্ড ট্যাক্স দায়]]।

৩. মালিকের স্বত্ব (Equity):
  মালিকের স্বত্ব হলো প্রতিষ্ঠানের সম্পদে মালিকদের অবশিষ্ট দাবি। এটি নিম্নলিখিত উপাদানগুলি নিয়ে গঠিত:

  * [[শেয়ার মূলধন]]: শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ।
  * [[সংরক্ষিত আয়]]: পূর্ববর্তী বছরগুলোর [[লাভ]] যা retained earnings হিসাবে জমা হয়েছে।
  * [[অন্যান্য রিজার্ভ]]: বিভিন্ন ধরনের রিজার্ভ, যেমন [[মূলধন রিজার্ভ]]।

বিল্যান্সিয়াল শীট তৈরির পদ্ধতি

বিল্যান্সিয়াল শীট সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়:

১. সম্পদ এবং দায়ের তালিকা তৈরি করা: প্রতিষ্ঠানের সমস্ত সম্পদ এবং দায়ের একটি বিস্তারিত তালিকা তৈরি করতে হবে।
২. সম্পদের শ্রেণীবিন্যাস: সম্পদগুলোকে চলতি এবং স্থায়ী এই দুইটি শ্রেণীতে ভাগ করতে হবে।
৩. দায়ের শ্রেণীবিন্যাস: দায়গুলোকে চলতি এবং দীর্ঘমেয়াদী এই দুইটি শ্রেণীতে ভাগ করতে হবে।
৪. হিসাব সমীকরণ প্রয়োগ: সম্পদ, দায় এবং মালিকের স্বত্বের পরিমাণ হিসাব সমীকরণের মাধ্যমে যাচাই করতে হবে (সম্পদ = দায় + মালিকের স্বত্ব)।
৫. বিবরণী প্রস্তুত: একটি নির্দিষ্ট বিন্যাসে সম্পদ, দায় এবং মালিকের স্বত্বের তথ্য উপস্থাপন করে বিল্যান্সিয়াল শীট প্রস্তুত করতে হবে।

বিল্যান্সিয়াল শীটের বিন্যাস

বিল্যান্সিয়াল শীটের দুটি প্রধান বিন্যাস রয়েছে:

১. অ্যাকাউন্ট বিন্যাস (Account Format): এই বিন্যাসে, সম্পদ এবং দায় উভয়ই বাম এবং ডান দিকে উল্লম্বভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়। মালিকের স্বত্ব সাধারণত বিল্যান্সিয়াল শীটের নীচে দেখানো হয়।

২. রিপোর্ট বিন্যাস (Report Format): এই বিন্যাসে, সম্পদগুলি বাম দিকে এবং দায় ও মালিকের স্বত্ব ডান দিকে তালিকাভুক্ত করা হয়। এই বিন্যাসটি বর্তমানে বেশি ব্যবহৃত হয়।

বিল্যান্সিয়াল শীটের গুরুত্ব

বিল্যান্সিয়াল শীট বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ:

* আর্থিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন: এটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা এবং স্থিতিশীলতা সম্পর্কে ধারণা দেয়।
* ঋণ প্রাপ্তি: ঋণদাতারা ঋণ দেওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানের বিল্যান্সিয়াল শীট বিশ্লেষণ করে।
* বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত: বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিল্যান্সিয়াল শীট ব্যবহার করে।
* অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা: ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং পরিকল্পনা করতে সহায়ক।
* [[মূল্যায়ন]]: কোনো ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের মূল্য নির্ধারণ করতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

বিল্যান্সিয়াল শীট বিশ্লেষণ

বিল্যান্সিয়াল শীট বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মূল্যায়ন করা যায়:

* [[তরলতা]] (Liquidity): প্রতিষ্ঠানের স্বল্পমেয়াদী দায় পরিশোধের ক্ষমতা।
* [[সলভেন্সি]] (Solvency): প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী দায় পরিশোধের ক্ষমতা।
* [[লাভজনকতা]] (Profitability): প্রতিষ্ঠানের লাভ অর্জনের ক্ষমতা।
* [[কার্যকারিতা]] (Efficiency): প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতা।

গুরুত্বপূর্ণ অনুপাত (Key Ratios)

বিল্যান্সিয়াল শীট বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুপাত হলো:

* চলতি অনুপাত (Current Ratio) = চলতি সম্পদ / চলতি দায়
* দ্রুত অনুপাত (Quick Ratio) = (চলতি সম্পদ - ইনভেন্টরি) / চলতি দায়
* ঋণ-থেকে-ইক্যুইটি অনুপাত (Debt-to-Equity Ratio) = মোট দায় / মোট ইক্যুইটি
* রিটার্ন অন অ্যাসেটস (Return on Assets) = নিট লাভ / মোট সম্পদ
* রিটার্ন অন ইক্যুইটি (Return on Equity) = নিট লাভ / মোট ইক্যুইটি

উদাহরণস্বরূপ বিল্যান্সিয়াল শীট

ধরা যাক, একটি প্রতিষ্ঠানের নিম্নলিখিত আর্থিক তথ্য রয়েছে:

* নগদ: ৫০,০০০ টাকা
* হিসাব receivable: ৩০,০০০ টাকা
* ইনভেন্টরি: ৪০,০০০ টাকা
* জমি: ১০০,০০০ টাকা
* যন্ত্রপাতি: ৮০,০০০ টাকা
* মোট সম্পদ: ৩০০,০০০ টাকা

* হিসাব payable: ২০,০০০ টাকা
* স্বল্পমেয়াদী ঋণ: ৩০,০০০ টাকা
* দীর্ঘমেয়াদী ঋণ: ৫০,০০০ টাকা
* মোট দায়: ১০০,০০০ টাকা

* শেয়ার মূলধন: ১০০,০০০ টাকা
* সংরক্ষিত আয়: ১০০,০০০ টাকা
* মোট মালিকের স্বত্ব: ২০০,০০০ টাকা

এই তথ্যের ভিত্তিতে বিল্যান্সিয়াল শীটটি নিম্নরূপ হবে:

{| class="wikitable"
|+ বিল্যান্সিয়াল শীট
|-
| ! colspan="2" | পরিমাণ (টাকা) |
|-
| ! colspan="2" | সম্পদ |
|-
| চলতি সম্পদ |  |
| নগদ | ৫০,০০০ |
| হিসাব receivable | ৩০,০০০ |
| ইনভেন্টরি | ৪০,০০০ |
| মোট চলতি সম্পদ | ১২০,০০০ |
|-
| স্থায়ী সম্পদ |  |
| জমি | ১০০,০০০ |
| যন্ত্রপাতি | ৮০,০০০ |
| মোট স্থায়ী সম্পদ | ১৮০,০০০ |
|-
| মোট সম্পদ | ৩০০,০০০ |
|-
| ! colspan="2" | দায় |
|-
| চলতি দায় |  |
| হিসাব payable | ২০,০০০ |
| স্বল্পমেয়াদী ঋণ | ৩০,০০০ |
| মোট চলতি দায় | ৫০,০০০ |
|-
| দীর্ঘমেয়াদী দায় |  |
| দীর্ঘমেয়াদী ঋণ | ৫০,০০০ |
| মোট দীর্ঘমেয়াদী দায় | ৫০,০০০ |
|-
| মোট দায় | ১০০,০০০ |
|-
| ! colspan="2" | মালিকের স্বত্ব |
|-
| শেয়ার মূলধন | ১০০,০০০ |
| সংরক্ষিত আয় | ১০০,০০০ |
| মোট মালিকের স্বত্ব | ২০০,০০০ |
|-
| মোট দায় ও মালিকের স্বত্ব | ৩০০,০০০ |
|}

এই বিল্যান্সিয়াল শীটটি দেখায় যে প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদ ৩০০,০০০ টাকা, মোট দায় ১০০,০০০ টাকা এবং মোট মালিকের স্বত্ব ২০০,০০০ টাকা।

[[হিসাববিজ্ঞান]]-এর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির সাথে বিল্যান্সিয়াল শীটের সম্পর্ক রয়েছে, যেমন [[ডাবল-এন্ট্রি বুককিপিং]], [[খরচ হিসাব]], এবং [[প্রকল্প মূল্যায়ন]]। এছাড়াও, [[টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস]], [[ভলিউম বিশ্লেষণ]], এবং [[ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা]] এর মতো বিষয়গুলোও আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে।

আরও জানতে:
* [[আর্থিক বিবরণী]]
* [[আয় বিবরণী]]
* [[নগদ প্রবাহ বিবরণী]]
* [[সম্পদ]]
* [[দায়]]
* [[মালিকের স্বত্ব]]
* [[হিসাববিজ্ঞান]]
* [[তরলতা]]
* [[সলভেন্সি]]
* [[লাভজনকতা]]
* [[কার্যকারিতা]]
* [[শেয়ার বাজার]]
* [[বিনিয়োগ]]
* [[ঋণ]]
* [[বাজেট]]
* [[হিসাব নিরীক্ষা]]
* [[কর পরিকল্পনা]]
* [[আর্থিক মডেলিং]]
* [[মূলধন বাজেট]]
* [[বিনিয়োগের মূল্যায়ন]]
* [[ঝুঁকি বিশ্লেষণ]]

[[Category:হিসাববিজ্ঞান]]
[[Category:আর্থিক_হিসাব]]

== এখনই ট্রেডিং শুরু করুন ==
[https://affiliate.iqbroker.com/redir/?aff=1085&instrument=options_WIKI IQ Option-এ নিবন্ধন করুন] (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10)
[http://redir.forex.pm/pocketo Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন] (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
=== আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন ===
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন [https://t.me/strategybin @strategybin] এবং পান:
✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত
✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ
✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি
✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ