View source for উপাদানের পর্যায় সারণী

উপাদানের পর্যায় সারণী

উপাদানের পর্যায় সারণী রসায়ন এবং পদার্থবিজ্ঞানের একটি মৌলিক কাঠামো। এটি পরিচিত সকল [[রাসায়নিক উপাদান]]কে তাদের [[পারমাণবিক সংখ্যা]] এবং [[রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য]] অনুসারে সাজানো একটি তালিকা। এই সারণীটি উপাদানগুলোর মধ্যে বিদ্যমান পর্যায়ক্রমিক প্রবণতাগুলো বুঝতে সাহায্য করে এবং নতুন উপাদান আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

==ইতিহাস==
পর্যায় সারণীর ধারণাটি ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে। এর প্রাথমিক রূপগুলো ১৮শ শতাব্দীর শেষভাগে এবং ১৯শ শতাব্দীর শুরুতে কয়েকজন বিজ্ঞানীর কাজের মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল।

*   [[জন ডালটন]] (John Dalton): ১৮০৩ সালে ডালটন প্রথম আধুনিক পরমাণু তত্ত্ব প্রস্তাব করেন, যা বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে পার্থক্য এবং তাদের সংমিশ্রণের নিয়ম ব্যাখ্যা করে।
*   [[ডোবেরেইনারের ত্রয়ক]] (Dobereiner's Triads): ১৮২৯ সালে জার্মান রসায়নবিদ ইয়োহান ডোবেরেইনার কিছু উপাদানকে তিনটি গ্রুপের মধ্যে সাজান, যেখানে দ্বিতীয় উপাদানের পারমাণবিক ভর প্রথম ও তৃতীয় উপাদানের পারমাণবিক ভরের গড় ছিল।
*   [[নিউল্যান্ডসের অষ্টক সূত্র]] (Newlands' Law of Octaves): ১৮৬৪ সালে জন নিউল্যান্ডস উপাদানগুলোকে তাদের পারমাণবিক ভর অনুসারে সাজিয়ে দেখেন যে প্রতি অষ্টম উপাদানটির বৈশিষ্ট্য পুনরাবৃত্ত হয়।
*   [[লোথার মেয়ার]] (Lothar Meyer): ১৮৬৯ সালে লথার মেয়ার ভরের ভিত্তিতে উপাদানের বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি গ্রাফ তৈরি করেন, যেখানে পর্যায়ক্রমিকতা দেখা যায়।
*   [[ডিমিত্রি মেন্ডেলিফ]] (Dmitri Mendeleev): ১৮৬৯ সালে ডিমিত্রি মেন্ডেলিফ পর্যায় সারণীর প্রথম কার্যকরী সংস্করণটি তৈরি করেন। তিনি উপাদানগুলোকে তাদের পারমাণবিক ভর এবং রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সাজান এবং কিছু ফাঁকা স্থান রাখেন, যেখানে তখনও আবিষ্কৃত হয়নি এমন উপাদানগুলোর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। মেন্ডেলিফের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরবর্তীতে সঠিক প্রমাণিত হওয়ায় তার সারণীটি বিজ্ঞান জগতে ব্যাপক স্বীকৃতি লাভ করে।

== আধুনিক পর্যায় সারণী ==
আধুনিক পর্যায় সারণী মেন্ডেলিফের কাজের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, তবে এটি [[পারমাণবিক সংখ্যা]]র উপর ভিত্তি করে সাজানো। [[হেনরি মোসলি]] ১৯১৩ সালে পারমাণবিক সংখ্যা ধারণাটি প্রবর্তন করেন, যা পর্যায় সারণীর আধুনিক ভিত্তি স্থাপন করে।

{| class="wikitable"
|+ আধুনিক পর্যায় সারণীর গঠন
|-
! পর্যায় (Period) !! গ্রুপ (Group) !! বৈশিষ্ট্য
|-
| ১ || ১A || ক্ষারীয় ধাতু (Alkali metals) - অত্যন্ত সক্রিয়
|-
|  || ২A || ক্ষারীয় মৃত্তৃকা ধাতু (Alkaline earth metals) - সক্রিয়
|-
|  || ৩B-১২B || संक्रमण ধাতু (Transition metals) - বিভিন্ন জারণ অবস্থা
|-
|  || ১৩A || বোরন গ্রুপ (Boron group)
|-
|  || ১৪A || কার্বন গ্রুপ (Carbon group)
|-
|  || ১৫A || নাইট্রোজেন গ্রুপ (Nitrogen group)
|-
|  || ১৬A || ক্যালকোজেন (Chalcogens)
|-
|  || ১৭A || হ্যালোজেন (Halogens) - অত্যন্ত সক্রিয় অধাতু
|-
|  || ১৮A || নিষ্ক্রিয় গ্যাস (Noble gases) - অত্যন্ত স্থিতিশীল
|}

*   '''পর্যায় (Period):''' পর্যায় সারণীর প্রতিটি অনুভূমিক সারিকে পর্যায় বলা হয়। প্রতিটি পর্যায়ে বাম থেকে ডানে ইলেকট্রন সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সাতটি পর্যায় রয়েছে।
*   '''গ্রুপ (Group):''' পর্যায় সারণীর প্রতিটি উল্লম্ব কলামকে গ্রুপ বলা হয়। একই গ্রুপের উপাদানগুলোর বাইরের ইলেকট্রন বিন্যাস একই থাকে, তাই তাদের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলোও অনুরূপ হয়। ১৮টি গ্রুপ রয়েছে।

==উপাদানসমূহের শ্রেণীবিভাগ==
উপাদানগুলোকে তাদের বৈশিষ্ট্য অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:

*   '''ধাতু (Metals):''' ধাতুগুলো সাধারণত কঠিন, উজ্জ্বল, এবং তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী। এরা সহজে ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়ন তৈরি করে। যেমন: [[সোডিয়াম]] (Sodium), [[ম্যাগনেসিয়াম]] (Magnesium), [[লোহা]] (Iron)।
*   '''অধাতু (Nonmetals):''' অধাতুগুলো সাধারণত গ্যাসীয় বা কঠিন অবস্থায় থাকে এবং এরা তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী। এরা সহজে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়ন তৈরি করে। যেমন: [[হাইড্রোজেন]] (Hydrogen), [[অক্সিজেন]] (Oxygen), [[ক্লোরিন]] (Chlorine)।
*   '''উপধাতু (Metalloids):''' উপধাতুগুলোর মধ্যে ধাতু এবং অধাতু উভয়ের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এদেরকে অর্ধপরিবাহী (semiconductors) বলা হয়। যেমন: [[সিলিকন]] (Silicon), [[জার্মেনিয়াম]] (Germanium)।
*   ''' transition ধাতু (Transition Metals):''' এই ধাতুগুলো d-অরবিটালে ইলেকট্রন প্রবেশ করায় বিভিন্ন জারণ অবস্থা প্রদর্শন করে এবং রঙিন যৌগ গঠন করে। যেমন: [[টাইটানিয়াম]] (Titanium), [[ভ্যানাডিয়াম]] (Vanadium), [[ক্রোমিয়াম]] (Chromium)।
*   '''অভ্যন্তরীণ transition ধাতু (Inner Transition Metals):''' এই ধাতুগুলো f-অরবিটালে ইলেকট্রন প্রবেশ করায় বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। এদের মধ্যে ল্যান্থানাইড ও অ্যাক্টিনাইড উল্লেখযোগ্য।

==পর্যায় সারণীর প্রবণতা==
পর্যায় সারণীতে কিছু নির্দিষ্ট প্রবণতা দেখা যায়, যা উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা দেয়।

*   '''পারমাণবিক ব্যাসার্ধ (Atomic Radius):''' একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে তার বাইরের ইলেকট্রন পর্যন্ত দূরত্বকে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বলে। পর্যায়ক্রমে বাম থেকে ডানে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ হ্রাস পায় এবং গ্রুপে উপর থেকে নিচে বৃদ্ধি পায়।
*   '''আয়নীকরণ শক্তি (Ionization Energy):''' একটি পরমাণু থেকে একটি ইলেকট্রন অপসারণ করতে প্রয়োজনীয় শক্তিকে আয়নীকরণ শক্তি বলে। পর্যায়ক্রমে বাম থেকে ডানে আয়নীকরণ শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং গ্রুপে উপর থেকে নিচে হ্রাস পায়।
*   '''ইলেকট্রন আসক্তি (Electron Affinity):''' একটি পরমাণুতে একটি ইলেকট্রন যোগ করার সময় নির্গত শক্তিকে ইলেকট্রন আসক্তি বলে। পর্যায়ক্রমে বাম থেকে ডানে ইলেকট্রন আসক্তি বৃদ্ধি পায় এবং গ্রুপে উপর থেকে নিচে হ্রাস পায়।
*   '''বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতা (Electronegativity):''' একটি পরমাণুর ইলেকট্রন আকর্ষণ করার ক্ষমতাকে বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতা বলে। পর্যায়ক্রমে বাম থেকে ডানে বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতা বৃদ্ধি পায় এবং গ্রুপে উপর থেকে নিচে হ্রাস পায়।

==পর্যায় সারণীর ব্যবহার==
পর্যায় সারণী রসায়ন এবং পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়:

*   উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য এবং তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক বোঝা।
*   নতুন উপাদান আবিষ্কার এবং তাদের বৈশিষ্ট্য ভবিষ্যদ্বাণী করা।
*   রাসায়নিক বিক্রিয়া এবং যৌগ গঠন সম্পর্কে ধারণা লাভ করা।
*   বিভিন্ন শিল্প এবং প্রযুক্তিতে উপাদানের ব্যবহার নির্ধারণ করা।

==বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে সম্পর্ক==
যদিও পর্যায় সারণী সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্কিত নয়, তবে কিছু মৌলিক ধারণা ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে। যেমন:

*   '''ঝুঁকি মূল্যায়ন (Risk Assessment):''' পর্যায় সারণীতে বিভিন্ন উপাদানের সক্রিয়তা এবং স্থিতিশীলতা বিবেচনা করা হয়। তেমনি, ট্রেডিংয়ে ঝুঁকির মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ।
*   '''বিশ্লেষণ (Analysis):''' পর্যায় সারণীর উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায়। ট্রেডিংয়েও বাজারের গতিবিধি এবং ডেটা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
*   '''ভবিষ্যদ্বাণী (Prediction):''' মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণী নতুন উপাদানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে সাহায্য করেছিল। ট্রেডিংয়েও টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস এবং অন্যান্য কৌশল ব্যবহার করে ভবিষ্যতের প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা করা হয়। [[টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ]] , [[ভলিউম বিশ্লেষণ]], [[ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা]] ইত্যাদি।

পর্যায় সারণী একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমে উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য বোঝা এবং নতুন আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করা সম্ভব।

==আরও জানতে==
*   [[রাসায়নিক বন্ধন]]
*   [[পরমাণুর গঠন]]
*   [[আইসোটোপ]]
*   [[রাসায়নিক বিক্রিয়া]]
*   [[জারণ বিজারণ]]
*   [[অম্ল ও ক্ষার]]
*   [[দ্রবণ]]
*   [[গ্যাসের সূত্র]]
*   [[তাপগতিবিদ্যা]]
*   [[রাসায়নিক সাম্যাবস্থা]]
*   [[জৈব রসায়ন]]
*   [[অজৈব রসায়ন]]
*   [[ভৌত রসায়ন]]
*   [[বিশ্লেষণাত্মক রসায়ন]]
*   [[পলি polymer]]
*   [[ন্যানোটেকনোলজি]]
*   [[স্পেকট্রোস্কোপি]]
*   [[ক্রিস্টালোগ্রাফি]]
*   [[ইলেকট্রোকেমিস্ট্রি]]
*   [[সারফেস কেমিস্ট্রি]]

[[Category:পর্যায় সারণী]]

== এখনই ট্রেডিং শুরু করুন ==
[https://affiliate.iqbroker.com/redir/?aff=1085&instrument=options_WIKI IQ Option-এ নিবন্ধন করুন] (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10)
[http://redir.forex.pm/pocketo Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন] (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
=== আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন ===
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন [https://t.me/strategybin @strategybin] এবং পান:
✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত
✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ
✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি
✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ